গণ-অভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্য সুবর্ণ সুযোগ: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত

গণ–অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এনে দিয়েছে
সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম ‘ট্রাম্প যুগে বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য দেন। ঢাকা, ১০ মার্চ , ছবি দেশীবার্তা

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পটপরিবর্তন বাংলাদেশের সামনে একটি সুবর্ণ সুযোগ তৈরি করেছে। এর ফলে দেশটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা পেয়েছে।

সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক এক আলোচনায় প্যানেল আলোচক হিসেবে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘ট্রাম্প যুগে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক’ শীর্ষক এই আলোচনায় তিনি বক্তব্য দেন।

সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আইবিএফবির সভাপতি লুৎফুন্নেসা সউদিয়া খান সভাপতিত্ব করেন। এতে আলোচকরা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি)-এর সহায়তা বন্ধের প্রভাব এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ এখন গণতন্ত্রের পথে: সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম বলেছেন, “নাটকীয় পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছে।” তিনি মনে করেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে তাঁর ধারণা ছিল, তবে দেশটি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এখন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ও প্রভাবশালী রাষ্ট্র হওয়ার পথে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় বাইরের বিশ্বে বলা যাবে, “বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে যুক্ততার মাধ্যমে অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য করা সম্ভব।”

গণতন্ত্র ও নির্বাচনের প্রসঙ্গে মাইলাম বলেন, বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার স্বার্থে মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডম সহায়তা করবে।

এ আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ডেনিলোভিচ বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন, তার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তেমন যোগসূত্র নেই।

ডেনিলোভিচ আরও বলেন, “যেমন ইউএসএআইডির সহায়তা বন্ধের বিষয়টি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কোনো সংযোগ নেই। একইভাবে, সীমান্ত নিরাপদ রাখতে নেওয়া অভিবাসননীতিও অভ্যন্তরীণ কারণে গৃহীত হয়েছে। কাজেই নতুন মার্কিন নীতি ও পদক্ষেপের লক্ষ্য বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে নয়।”

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবেক কূটনীতিকদের বিশ্লেষণ

ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কেমন হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক উপরাষ্ট্রদূত জন এফ ডেনিলোভিচ বলেছেন, এখনই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলার সময় আসেনি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার সবকিছুই প্রেসিডেন্টের হাতে নয়, কংগ্রেসসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এতে ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্যের বিরুদ্ধে সতর্কবার্তা

বাংলাদেশ সম্পর্কে ছড়ানো অপতথ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ডেনিলোভিচ বলেন, “উগ্রবাদ ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অনেক অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এসব সমালোচনার জবাব সত্য দিয়েই দিতে হবে, মিথ্যার বিপরীতে মিথ্যা দিয়ে নয়।”

‘ডিপ স্টেট’ (গভীর রাষ্ট্র) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে কাজ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি নেওয়া হলে সেটাকে ডিপ স্টেট বলা যায় না, বরং এটি রাষ্ট্রের নিয়মিত নীতি কার্যক্রমের অংশ।”

৫ আগস্টের পটপরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) সভাপতি এম হুমায়ুন কবীর বলেছেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করেছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তা নাকচ করে দিয়েছেন। এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক বার্তা বহন করে।

তিনি আরও বলেন, “এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের সম্পর্ক চ্যারিটি (দান-খয়রাত) নয়। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীন—সব দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চায়। সম্পর্ক উন্নত হলে দুই দেশ থেকেই বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ আসবে, যা গণতান্ত্রিক দুর্বলতার কারণে এত দিন সম্ভব হয়নি।”

গণতন্ত্র ও বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার গুরুত্ব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ এম শাহান মনে করেন, বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শুধু অর্থনৈতিক নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তাও প্রয়োজন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “এই সহায়তা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারকে সহজ করবে।”

তিনি আরও বলেন, “স্থিতিশীল গণতন্ত্রের জন্য নির্বাচনই শেষ কথা নয়। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনকেই লক্ষ্য ধরা হলে গণতন্ত্র কখনো সুসংহত হবে না। গণতন্ত্রের চর্চা, সংস্কার, উন্নয়ন ও ব্যবসা-বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অপরিহার্য।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *