
ফ্যাশন শো ঘিরে কাশ্মীরের রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গনে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এবং রাজনৈতিক নেতারা অভিযোগ করেছেন, এমন আয়োজন কাশ্মীরের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। বিধানসভায় এ বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বিরোধী নেতারা।
কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, তিনি এ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং আয়োজকদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরি জনগণের আবেগকে সম্মান না দিয়ে কোনো কিছুই করা উচিত নয়। গুলমার্গের এই শো আমাদের সংস্কৃতির প্রতি অসম্মানজনক।’
ফ্যাশন শোর আয়োজকরা অবশ্য বলছেন, তাঁরা কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পর্যটন সম্ভাবনাকে তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয়দের একাংশ মনে করছেন, এই শো কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি ও জনগণের অনুভূতিকে উপেক্ষা করে আয়োজন করা হয়েছে।
এই ঘটনা কাশ্মীরে ফ্যাশন ও আধুনিকতার সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
কাশ্মীরের গুলমার্গে আয়োজিত ফ্যাশন শো ঘিরে বিতর্ক আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে এমন আয়োজনকে ‘অশালীন’ ও ‘সংস্কৃতিবিরোধী’ বলে মন্তব্য করেছেন হুরিয়ত ও পিডিপি নেতারা।
হুরিয়ত নেতা মীরওয়াইজ ওমর ফারুক এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, ‘পবিত্র রমজান মাসে এমন কুরুচিকর আয়োজন মেনে নেওয়া যায় না।’ একই সুরে আপত্তি জানিয়েছেন পিডিপি নেত্রী ও জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেছেন, ‘এই অশ্লীলতা কাশ্মীরি সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে একেবারেই বেমানান।’
বিতর্কের সূত্রপাত ফ্যাশন শোর মডেলদের পোশাক ও আয়োজনের ধরন নিয়ে। শোয়ের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়। সমালোচকদের মতে, এমন একটি আয়োজন শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুভূতিতেই আঘাত হানেনি, বরং এটি কাশ্মীরের ঐতিহ্য ও সামাজিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।
অন্যদিকে, আয়োজকদের দাবি, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটন সম্ভাবনাকে তুলে ধরা। তবে স্থানীয়দের একাংশ ও রাজনৈতিক মহল এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে বলছেন, কাশ্মীরের বাস্তব পরিস্থিতি উপেক্ষা করে এমন আয়োজন করা মোটেও যুক্তিযুক্ত নয়।
কাশ্মীরের গুলমার্গে ফ্যাশন শো আয়োজনের ঘটনায় বিতর্ক এখন তুঙ্গে। এই ইস্যুতে বিধানসভাও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সমালোচনার মুখে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ। তবে তিনিও এই আয়োজনের বিরোধিতা করেছেন।
বিধানসভায় ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘কাশ্মীরি জনতার ক্ষুব্ধ হওয়া স্বাভাবিক। রমজান মাসে স্থানীয় ভাবাবেগের তোয়াক্কা না করেই এই আয়োজন করা হয়েছে, যার সঙ্গে প্রশাসনের কোনো যোগ নেই।’ তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বিতর্ক নিয়ে ভিন্ন মতও উঠে এসেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘রমজান তো সারা দেশেই পালিত হচ্ছে। তা হলে কি গোটা দেশে ফ্যাশন শো বন্ধ রয়েছে?’ অনেকে আবার মনে করছেন, ‘ফ্যাশন বিশ্বের নজরে আসায় বরং কাশ্মীরের গর্ব হওয়া উচিত।’
এই বিতর্কের ফলে গুলমার্গের ফ্যাশন শো এখন শুধুমাত্র একটি সাংস্কৃতিক ইস্যু নয়, বরং রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।