ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে মরদেহের মিছিল: ছিনতাই নাকি পরিকল্পিত খুন?

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনে মরদেহের মিছিল: ছিনতাই নাকি পরিকল্পিত খুন?

ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের নিরব স্পটগুলো যেন আজ এক একটি গোপন কবরস্থান। গত কয়েক বছরে এই লাইনের বিভিন্ন অংশে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় দেড়শ’র মতো অজ্ঞাতপরিচয় মরদেহ। বিশেষ করে আখাউড়া, ভৈরব, কসবা, বি-বাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী অংশে এসব লাশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।

যমুনা টিভির ‘ক্রাইম সিন’ অনুষ্ঠানে সম্প্রচারিত একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়ঙ্কর তথ্য: এসব মৃত্যুর বেশিরভাগই আত্মহত্যা নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত খুনের ঘটনা। অথচ পুলিশ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোকে অজ্ঞাত আত্নহত্যা হিসেবে রেকর্ড করে— এরপর মর্গ হয়ে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, এসআই ইমরান (পিবিআই), জানিয়েছেন যে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব খুনের পেছনে রয়েছে ছিনতাইকারী চক্র। তাদের লক্ষ্য সাধারণ যাত্রী, বিশেষ করে যারা রাতের ট্রেনে ভ্রমণ করেন।

ছিনতাইয়ের নৃশংস কৌশল:
রাতের ট্রেনে দুই বগির মাঝখানের করিডোরকে টার্গেট করে ছিনতাইকারীরা। দুইজন মিলে পেছন থেকে গামছা পেঁচিয়ে যাত্রীর গলায় এক প্যাঁচ দিয়ে দুপাশ থেকে টান দেয়— ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রীর পকেট থেকে মোবাইল, টাকা ইত্যাদি লুট করে পাশের দরজা দিয়ে ফেলে দেয় চলন্ত ট্রেন থেকে। এই নৃশংস কাজটি শেষ করতে সময় লাগে মাত্র দেড় মিনিট।

চেহারা থাকে না, পরিচয় মেলে না:
মৃতদেহগুলো অনেক সময় চেনার উপায় থাকে না। ধর্ম, জাতপাত নির্বিশেষে মাটিচাপা দেওয়া হয়। মৃতের জামাকাপড় রেলওয়ে ডোম ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখা হয়, যাতে পরিবার খুঁজে এসে সনাক্ত করতে পারে। কিন্তু দুই বছরের মধ্যে কেউ না এলে সব হারিয়ে যায় সময়ের স্রোতে।

আইনের বাধা:
এই চক্রের কিছু সদস্য ধরা পড়লেও অধিকাংশ সময় প্রমাণের অভাবে জামিনে বের হয়ে যায়। যথেষ্ট এভিডেন্স না থাকায় বিচার করা সম্ভব হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *