
দোলযাত্রায় শান্তি নিশ্চিত করতে রাজ্যগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
দোলযাত্রার দিন ভারতজুড়ে শান্তি বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিটি রাজ্য সরকারকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। মূলত, এ বছর হোলি বা দোলযাত্রা রমজান মাসে এবং জুমাবারে (শুক্রবার) উদযাপিত হওয়ায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এড়াতে এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতাদের উসকানিমূলক মন্তব্য এবং বিজেপিশাসিত কিছু রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের লাগামহীন বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও সংবেদনশীল করে তুলেছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এ বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্য সরকারগুলোকে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
দুই দিন আগে উত্তর প্রদেশের সম্ভল শহরের এক পুলিশ কর্মকর্তা বিতর্কিত মন্তব্য করেন যে, মুসলমানদের যদি রং নিয়ে আপত্তি থাকে, তাহলে হোলির দিন তাঁদের ঘরে আবদ্ধ থাকা উচিত। এই মন্তব্য নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভল শহরে একটি মসজিদের মালিকানা নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে, যা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ফলে সেখানে উত্তেজনা আরও বেশি।
এ পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তর প্রদেশের প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। লক্ষ্ণৌসহ বিভিন্ন শহরের মুসলিম ধর্মীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জুমার নামাজের সময় পরিবর্তন করে দুপুর ১২টার পরিবর্তে বেলা ২টা থেকে আড়াইটার মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসনের লক্ষ্য, হোলি উদযাপনের সময় যাতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়।
দোলযাত্রা ও জুমার নামাজ ঘিরে সতর্কতা, রাজনৈতিক উত্তেজনাও বাড়ছে
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দোলযাত্রা ও জুমার নামাজ একই দিনে পড়ায় প্রশাসনিক সতর্কতা জারি করা হয়েছে। লক্ষ্ণৌ ঈদগাহের ইমাম জানিয়েছেন, জুমার নামাজ বেলা ২টায় শুরু হবে এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনুরোধ করেছেন যেন তাঁরা স্থানীয় মসজিদেই নামাজ আদায় করেন, দূরের মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
বেরিলির মওলানা মুফতিও মুসলমানদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেন তাঁরা নিজ গৃহে অবস্থান করেন। তিনিও বেলা ২টার পর নামাজের সময় নির্ধারণ করেছেন। সম্ভল মসজিদের ইমাম জানিয়েছেন, সেখানে জুমার নামাজ শুরু হবে বেলা আড়াইটায়।
এদিকে, হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রং খেলার সময়সূচি সকাল থেকে বেলা ২টা–আড়াইটার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। সম্ভল জেলার শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শান্তি রক্ষায় অতিরিক্ত সাত কোম্পানি সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিহারে বিজেপি বিধায়কের মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক
বিজেপিশাসিত বিহারে দোলযাত্রা ও জুমার নামাজ নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনাও তৈরি হয়েছে। মধুবনি জেলার বিজেপি বিধায়ক হরিভূষণ ঠাকুর মুসলমানদের উদ্দেশে বলেছেন, “হোলির দিন মুসলমানদের ঘরের বাইরে না বেরোনোই ভালো”। তিনি আরও বলেন, “বছরে ৫২টি জুমাবার রয়েছে, একটি শুক্রবার হোলিতে পড়েছে, তাই মুসলমানদের উচিত ঘরে থাকা, যাতে হিন্দুরা নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন করতে পারে”। তবে তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেছেন ভুলবশত কারও গায়ে রং লাগলে ক্ষুব্ধ না হতে।
বিজেপি বিধায়কের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিহারের বিরোধী নেতা তেজস্বী যাদব। তিনি অভিযোগ করেন, “বিজেপি ও আরএসএস সব সময় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উসকে দিতে চায়, তবে বিহারের মানুষ বারবার তাদের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে”।
তেজস্বীর দাবি, দোলের দিন মুসলমানদের ঘরবন্দী থাকার পরামর্শ দেওয়া মানেই সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করা। তিনি মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে মামলা করার। হরিভূষণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এটি তাঁর বাপের রাজত্ব নয়। বিহারে মুসলমানদের রক্ষা করতে সবসময় পাঁচ–ছয়জন হিন্দু এগিয়ে আসেন, এখানে দাঙ্গা বাধতে দেওয়া হবে না”।