
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কিছু নয়: জামায়াত আমির
লন্ডনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সাক্ষাৎ হলেও তা ছিল “সাধারণ আলোচনা”, কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নয় বলে জানিয়েছেন জামায়াতের আমির।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর এক হোটেলে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে প্রায় ১১ দিনের সফর শেষে গত সোমবার দেশে ফেরেন তিনি।
শফিকুর রহমান বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর মতো বিএনপিও জুলুমের শিকার হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াও জুলুমের শিকার। দেশ ছাড়ার আগে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা থাকলেও তখন সেটা সম্ভব হয়নি। পরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে এক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়।”
তিনি আরও জানান, সাক্ষাতে রাজনৈতিক কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি, বরং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বাভাবিক কথাবার্তাই হয়েছে।
খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিতেই সাক্ষাৎ, রাজনীতি প্রসঙ্গে সাধারণ আলোচনা হয়েছে: জামায়াত আমির
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে সাক্ষাতের মূল উদ্দেশ্য ছিল তাঁর শারীরিক ও পারিবারিক খোঁজখবর নেওয়া—এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা তাঁকে (খালেদা জিয়া) অত্যন্ত সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে দেখতে গিয়েছিলাম। যেহেতু তিনি এখন তাঁর ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছেন, তাই তাঁর উপস্থিতিও স্বাভাবিক। দুই দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এক জায়গায় বসলে রাজনৈতিক আলোচনা হবেই, তবে সেটি ছিল কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়াই।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কবে হবে, কীভাবে হবে, বিচারব্যবস্থা কীভাবে চলছে—এ রকম নানা বিষয়ে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয়নি।”
রাজনীতিতে মতপার্থক্যকে স্বাভাবিক উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, “মতপার্থক্য থাকা জরুরি, নইলে রাজনীতিবিদেরা অন্ধ হয়ে যাবেন। কিন্তু এ পার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। আমরা একটি শ্রদ্ধাশীল রাজনৈতিক পরিবেশ চাই।”
তিনি আরও যোগ করেন, “রাজনীতিতে মত প্রকাশ করব, কিন্তু জোর করে নিজের মত চাপিয়ে দেব না। আমি আমার মত দেব, বলব কেন এটি দেশের জন্য ভালো। কিন্তু অন্যের মত প্রকাশের অধিকারও থাকবে। এটিই গণতন্ত্রের ভাষা হওয়া উচিত।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের আলোচনা
সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে ব্রাসেলসে সফর করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল। সেখানে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছিল কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান জানান, “এটি নিয়ে অবশ্যই কথা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, তবে সবাই নয়, দু’একটি জায়গায় তাঁরা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন।” তিনি আরও জানান, জামায়াতের পক্ষ থেকে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বলেছিলেন, “আমাদের দেশে একটি গণহত্যা হয়েছে, যার ফলে শহীদের মা, শিশুরা এখনও কান্নাকাটি করছে, স্ত্রীরাও কষ্ট পাচ্ছে, এবং আহতরা এখনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। আমরা জাতি হিসেবে তাদের জন্য যা করণীয়, সেটাও পুরোপুরি করতে পারিনি। গোটা জাতি ট্রমাটাইজড। কারণ, জুলাই-আগস্টে এই সময়টায় সরকার কার্যত গোটা জাতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এই আন্দোলন কোনো একক দলের বা পক্ষের ছিল না, এটা ছিল জনতার আন্দোলন।”
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রতি জনগণের আস্থা হারানো: জামায়াত আমির
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ তো অপার সুযোগ পেয়েছিল। একটানা তিনটি নির্বাচন তাদের অধীনে হয়েছে, কিন্তু সেই নির্বাচনগুলোকে সত্যিকারের নির্বাচন বলা যায় না। তারা নির্বাচনের মানে ও গুরুত্ব হারিয়ে ফেলেছে। এমনকি, আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও নির্বাচনের প্রতি তাদের আস্থা হারিয়েছে এবং ভোট দিতে যায়নি। দিস ইজ ফ্যাক্ট (এটাই বাস্তবতা)।”
তিনি আরও বলেন, “এমন এক দলকে কি বাংলাদেশের জনগণ এখন গ্রহণ করবে? এবং আওয়ামী লীগ কি তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করেছে? এটাই বড় প্রশ্ন। এই কথার পর বিদেশিরা আর কিছু বলেনি, তারা থেমে গেছে।”
শফিকুর রহমান সতর্ক করেন, “বাস্তবতা সকলকেই মেনে নিতে হবে, এবং দিস ইজ রিয়েলিটি (এটাই বাস্তবতা)।”