রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির

রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির
জাতীয় সংসদের এলডি হলে বৃহস্পতিবার দিনভর সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা হয়

সংবিধান সংস্কারে বিএনপির অনড় অবস্থান, কিছু সুপারিশ বিবেচনায়

সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপি তাদের আগের লিখিত প্রস্তাবগুলোর পক্ষেই অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় দলটি স্পষ্ট করে জানায়, সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে পরিবর্তনের সুপারিশে তাদের জোরালো আপত্তি রয়েছে।

তবে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, কমিশনের কিছু যুক্তিসংগত প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়তে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক আলোচনায় রয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবেই গতকাল বিএনপির সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনা হয়। তবে উভয়পক্ষই জানিয়েছে, আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আগামী রোববার আবারও আলোচনা বসবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব (প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে

মূলনীতি নিয়ে বিএনপির স্পষ্ট অবস্থান, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ ও ‘বহুত্ববাদে’ আপত্তি

সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম দিনের আলোচনা শেষে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। গতকাল বিকেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি চায় পঞ্চদশ সংশোধনী পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়া, যেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নয় বরং ‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ছিল রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি। তিনি জানান, ওই কাঠামোয় গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদসহ অন্যান্য মৌলিক নীতির উপস্থিতি ছিল।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি ‘বহুত্ববাদ’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র নীতির পক্ষে নয় এবং এগুলোর বিরোধিতা করেছে দলটি। সংবিধানে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’ অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে সালাহউদ্দিন জানান, বিষয়গুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে থাকলেও এগুলোকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে সংযুক্ত করার ব্যাপারে দলীয়ভাবে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

এদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আলোচনা প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। আগামী রোববার বিএনপির সঙ্গে দ্বিতীয় দফার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

১৬৬ দফা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা শুরু, বিএনপির সঙ্গে দিনব্যাপী বৈঠকে ঐকমত্য কমিশন

সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ১৬৬টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার পর একক আলোচনা পর্ব শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। যেসব বিষয়ে দলগুলোর ভিন্নমত বা আংশিক সম্মতি রয়েছে, সেগুলো নির্ধারণ করে আলাদাভাবে আলোচনা করছে কমিশন। এই ধারাবাহিকতায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে দিনব্যাপী প্রথম দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

জাতীয় সংসদের এলডি হলে সকাল সাড়ে দশটায় শুরু হওয়া বৈঠকে বিএনপির পক্ষে অংশ নেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাঈল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল ও সাবেক সচিব মনিরুজ্জামান খান। ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে আলোচনায় ছিলেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও সফর রাজ হোসেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য) মনির হায়দার।

বৈঠকের শুরুতে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু বারবার বাধাগ্রস্তই হয়নি, বরং ব্যক্তি কেন্দ্রীক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো একটি জাতীয় সনদের মাধ্যমে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি করা।”

রুদ্ধদ্বার এই আলোচনা বিরতি দিয়ে চলে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত। উভয়পক্ষ জানিয়েছে, আলোচনা এখনো শেষ হয়নি। আগামী রোববার দ্বিতীয় দফা বৈঠকে বসবে কমিশন ও বিএনপি।

রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির
বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ–সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে

আলোচনার প্রথম দিনে মৌলিক বিষয়ে অনড় বিএনপি, অংশবিশেষে নমনীয়তা
কমিশনের এক-তৃতীয়াংশ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা, পরবর্তী বৈঠকে আসবে বিতর্কিত বিষয়গুলো

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রথম দিনের আলোচনায় বিএনপি তাদের মৌলিক অবস্থানে অটল থেকেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আলোচ্য ১৬৬টি প্রস্তাবের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে গতকাল দিনব্যাপী আলোচনা হয়, যেখানে বিএনপির নেতারা দলীয় অবস্থানের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন এবং অনেক বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা দেন। কমিশনের পক্ষ থেকে এদিন মূলত বিএনপির বক্তব্য শোনা হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে পাল্টা যুক্তিও তুলে ধরা হয়।

বৈঠকে বিএনপি কিছু ছোটখাটো বিষয়ে নমনীয়তা দেখালেও মূল প্রস্তাবগুলোতে অনড় ছিল। উদাহরণস্বরূপ, সংসদ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবে দলটি নীতিগতভাবে একমত হলেও, উচ্চকক্ষে সদস্য নির্বাচনে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি’ প্রস্তাব নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে। বিএনপির মতে, এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদে বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনার পরই চূড়ান্ত হওয়া উচিত।

বিএনপি আরও জানিয়েছে, তারা সংসদের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। একইভাবে মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত কিছু সুপারিশ এবং সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়েও দলটির আপত্তি রয়েছে, যদিও আসনসংখ্যা ১০০-তে উন্নীত করার বিষয়ে একমত আছে।

সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়াগত দিক নিয়েও দলটি স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে—তাদের মতে, এটি হতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই।

এদিকে, আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “মৌলিক বিষয়গুলোতে আমরা আমাদের অনড় অবস্থান প্রকাশ করেছি। তবে কিছু বিষয়ে কমিশনের পরামর্শ বিবেচনায় আছে; তা নিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”

প্রস্তাবিত বিতর্কিত বিষয়ে—যেমন, এক ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া বা একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলপ্রধান না থাকা—এখনো আলোচনা হয়নি। এসব বিষয় আসছে রোববারের বৈঠকে আসবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, বিএনপি যেখানে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের বিরোধিতা করছে, সেখানে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক কমিটি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো দলগুলো বরং মৌলিক সংস্কারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। এনসিপি জানিয়েছে, মৌলিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও একই কথা বলেছেন, উল্লেখ করে যে নির্বাচনপূর্ব তিনটি শর্তের মধ্যে প্রথম শর্তই হচ্ছে “দৃশ্যমান ও গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার”।

এই তিন দলের সঙ্গে এখনও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়নি। তবে পর্যায়ক্রমে সব দলের সঙ্গে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

৭০ অনুচ্ছেদে ভিন্নমত, গণভোটেও সীমিত সমর্থন—সংবিধান সংস্কার নিয়ে বিএনপির ব্যাখ্যা
“বেশ কিছু বিষয়ে কাছাকাছি এসেছি”—বলে মন্তব্য করলেন সালাহউদ্দিন আহমদ

সংবিধান সংস্কার ইস্যুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রথম দফার আলোচনায় বিএনপির নেতারা জানান, কিছু বিষয়ে কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য রয়েছে, আবার কিছু বিষয়ে আলোচনা শেষে মতের কাছাকাছিও আসা গেছে। আলোচনার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “অনেক বিষয় আছে, যেগুলো নিয়ে আগে দ্বিমত ছিল, এখন কিছুটা মত এসেছে। সবকিছু কম্পাইল করে জানাবো।”

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রশ্নে বিএনপি পুরোপুরি কমিশনের সঙ্গে একমত নয়। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য সব বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীন মতপ্রকাশের সুযোগ রাখার বিষয়ে বিএনপি আপত্তি জানিয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “এই পদ্ধতি কার্যকর হলে সরকারের স্থায়িত্ব বিঘ্নিত হতে পারে, রাষ্ট্র পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হতে পারে।” বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী—অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা–সংক্রান্ত বিষয়ের বাইরে সংসদ সদস্যদের আলোচনার সুযোগ থাকতে পারে, তবে পূর্ণ স্বাধীনতা নয়।

গণভোট প্রশ্নেও সংরক্ষিত মত
সংবিধান সংস্কারে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবের পক্ষে নয় বিএনপি। সালাহউদ্দিন জানান, “শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়ে গণভোট হতে পারে, সব বিষয়ের জন্য গণভোটের প্রয়োজন নেই।”

সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়েও দ্বিমত
জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে এদিন আলোচনা হয়নি। তবে বিএনপি লিখিতভাবে জানিয়েছে, তারা এই ধারণার সঙ্গে একমত নয়।

সব মিলিয়ে প্রথম দিনের আলোচনার সারাংশ হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “আমরা প্রায় বিষয়ে কাছাকাছি আসতে পেরেছি। কিছু বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে, সেগুলো পরবর্তী বৈঠকে উত্থাপিত হবে।” আগামী রোববার দ্বিতীয় দফা বৈঠকে আলোচনার বাকি অংশ অনুষ্ঠিত হবে।

‘হ্যাঁ-না’ ফর্ম নিয়ে বিভ্রান্তি, সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না—বলেন সালাহউদ্দিন
বিস্তারিত প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের অসংগতির অভিযোগ বিএনপির

সংবিধান সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার প্রথম দিনে বিএনপির নেতারা শুধু মতবিনিময়েই অংশ নেননি, বরং কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ ও উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। দুপুরে বৈঠকের এক ফাঁকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সেখানে তিনি জানান, কমিশনের দেওয়া ‘হ্যাঁ-না’ ভিত্তিক প্রশ্নপত্র বিভ্রান্তিকর ছিল এবং এতে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

সালাহউদ্দিন বলেন, “কমিশনের পক্ষ থেকে যেটা স্প্রেডশিট আকারে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে সংক্ষেপে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মত জানানোর কথা বলা হয়—সেটা অনেকটা মিসলিডিং (ভুল পথে পরিচালিত করার মতো) ছিল। কারণ, যেসব বিষয়ে সংক্ষেপে মতামত চাওয়া হয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের বিশদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার বিস্তর ফারাক রয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “সংবিধান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। সেটিকে সরলীকরণ করে দেখা উচিত নয়। আমরা বিশ্বাস করি, সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো প্রচেষ্টা বা ভুল ব্যাখ্যা সমুচিত হবে না।”

বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনের পক্ষে নয়, বরং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমেই প্রয়োজনীয় সংস্কার হওয়া উচিত। প্রথম দিনের আলোচনায় স্পষ্ট হয়েছে, বিভিন্ন প্রস্তাবে তারা কৌশলগত ও নীতিগতভাবে কিছু বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও, আলোচনার পথ খোলা রেখেছে।

কমিশনের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, আলোচনা চলমান রয়েছে এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যেমন জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ ইত্যাদি—পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা হবে।

বিচারক নিয়োগে অধ্যাদেশ অসাংবিধানিক হতে পারে—বিএনপি
“বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না”—সালাহউদ্দিন আহমদ

সংবিধান সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বিএনপির পক্ষ থেকে বিচার বিভাগ সংক্রান্ত দুটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ—৯৫ ও ১১৬—নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, বিচারক নিয়োগসংক্রান্ত ৯৫ অনুচ্ছেদ সংশোধন না করেই অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে, যা অসাংবিধানিক হতে পারে।

তিনি বলেন, “যথাযথ আইনগত ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বিচারক নিয়োগের জন্য অধ্যাদেশ জারি করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে। সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”

একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অপরিবর্তিত থাকলে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা কি সংবিধান সম্মত হবে? বিএনপির এই নেতা স্পষ্ট করে বলেন, “বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে, তবে তা যেন আইনানুগ ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে হয়। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না।”

‘সবকিছুর মূলে জনগণ’—আলোচনার শুরুতেই নজরুল ইসলাম খান
বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনা শুরুর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “বিএনপি সংস্কারের বিরোধিতা করে না, বরং বিএনপি নিজেই সংস্কারের দল। তবে এই সংস্কার জনগণের সম্মতিতে হতে হবে। আর জনগণ কার মাধ্যমে মতামত দেয়, তা আমরা সবাই জানি।”

তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-সংগ্রাম হয়েছে। এখন আবার একটা সুযোগ এসেছে। আমরা চাই সেটাকে কাজে লাগাতে। তাই কমিশন ও সরকারকে সহযোগিতা করছি।”

তাঁর আহ্বান, “আমরা সবাই ভালো চাই। আরও ভালো চাই। তবে ‘খুব ভালো’ করার জন্য যেন এত দেরি না হয়, যাতে মানুষের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে।”

বিএনপির বক্তব্যে স্পষ্ট, দলটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সংবিধান সংস্কারে আগ্রহী, তবে সবকিছু হতে হবে জনগণের সম্মতিতে, সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *