
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব দীর্ঘ নয় খুশদিল শাহর, মাত্র ছয় বছর ধরে পাকিস্তান দলের হয়ে খেলছেন এই অলরাউন্ডার। তবে শুরু থেকেই প্রশংসার চেয়ে সমালোচনার মুখেই পড়েছেন বেশি। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে সিরিজে এক দর্শকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে আবারও বিতর্কে পড়েন তিনি।
ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে বিবৃতি দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডের পর উত্তেজিত হয়ে এক দর্শকের দিকে তেড়ে যান খুশদিল। এ নিয়ে ঘটনার প্রায় তিন সপ্তাহ পর মুখ খুলেছেন তিনি।
পাকিস্তান সুপার লিগে করাচি কিংসের হয়ে খেলা এই অলরাউন্ডার বলেন, ‘দর্শকের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছে, সেগুলো ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমি এত দিন ধরে নানা ধরনের অপমান সহ্য করে এসেছি। কিন্তু কেউ যখন আমার দেশ বা মা-বাবাকে নিয়ে কটূক্তি করে, তখন আর চুপ থাকা যায় না।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে মনে করেন আমি পক্ষপাতের কারণে দলে সুযোগ পাই। এসব কথা আমার কাছে নতুন না, কিন্তু ব্যক্তিগত সীমারেখা কেউ পার করলে প্রতিক্রিয়া দিতেই হয়।’
জিও নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খুশদিল আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, তিনি সবসময় দেশের হয়ে নিজের সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারিবারিক বা জাতীয় গর্বে আঘাত লাগলে সেটা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।
নিউজিল্যান্ড সফরের এক ওয়ানডে ম্যাচের পর দর্শকের সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে জড়িয়ে আলোচনায় আসা পাকিস্তানি ক্রিকেটার খুশদিল শাহ অবশেষে মুখ খুলেছেন ঘটনার ব্যাপারে। সম্প্রতি জিও নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে জানান এই অলরাউন্ডার।
তিনি বলেন, ‘সেদিন ব্যক্তিগত অপমান আমি সহ্য করেছি। কিন্তু যখন আমার জাতি আর পরিবারকে অপমান করা হলো, তখন তা সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায়। ভবিষ্যতে এমন কিছু আবার ঘটলে আমি একই প্রতিক্রিয়া দেখাব।’
দলে তাঁকে পক্ষপাতের মাধ্যমে নেওয়া হয়—এমন অভিযোগ বহুবার উঠেছে। কিন্তু খুশদিল সোজাসাপটা বলেছেন, ‘ছয় বছরে তিন-চারবার বাদ পড়ার পর নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই দলে ফিরেছি। কখনো দ্বাদশ খেলোয়াড় হয়েছি, তবুও নিজের ফর্ম ধরে রাখতে সব সময় পরিশ্রম করে গেছি, যেন সুযোগ পেলে দলের জন্য কিছু করতে পারি।’
৩০ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার নিজের প্রতি দেশের ভক্ত ও গণমাধ্যমের সমর্থনের অভাব নিয়ে আক্ষেপও প্রকাশ করেন। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ধারাবাহিক সমালোচনায় তিনি ক্ষুব্ধ। তাঁর ভাষায়, ‘সব সময়ই সমালোচনার মুখে পড়ি। পাশে কেউ থাকলে মানুষ এমন করত না। প্রশ্ন হচ্ছে—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা কথা বলে, তারা কি আমার পারফরম্যান্স সত্যিই দেখে?’
ওয়ানডেতে ৩২.৮০ ও টি–টোয়েন্টিতে ১৮.২৮ গড়ে রান করা এই ব্যাটার বলেন, ‘আমার রেকর্ড দেখলেই বোঝা যায়, কীভাবে আমি দলে এসেছি। আমি কোনো ক্রিকেটারের ছেলে না, না কোনো রাজনীতিকের আত্মীয়। আমি এসেছি এক সাধারণ, সম্মানিত পরিবার থেকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বোর্ড বা টিম ম্যানেজমেন্টে আমার কোনো ঘনিষ্ঠ কেউ নেই। সমালোচনাগুলো আমার মনোবল ভাঙে না ঠিকই, কিন্তু যদি পাশে কেউ থাকত, তাহলে হয়তো এতটা হত না। যারা দলের জয়ে কোনো প্রভাব ফেলে না এমন সেঞ্চুরি করে, তাদের চেয়ে আমার ২০–২৫ রানের ইনিংস অনেক বেশি কার্যকর।’
সাক্ষাৎকারজুড়ে খুশদিল জানিয়ে দেন, নিজের লড়াইটা তিনি চালিয়ে যেতে চান মাঠেই, ব্যাট হাতে—not keyboard warriors এর সামনে।