৩৪ বছর পর কক্সবাজারে, রোজিনার মনে পড়ে গেল জাফর ইকবালের কথা—কেন?

৩৪ বছর পর কক্সবাজারে, রোজিনার মনে পড়ে গেল জাফর ইকবালের কথা—কেন?
জাফর ইকবাল ও রোজিনা

দীর্ঘ ৩৪ বছর পর কক্সবাজারে ফিরে গিয়ে আবেগে ভেসেছেন বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। সমুদ্রের ধারে দাঁড়িয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল তাঁর। সেই স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা, প্রয়াত জাফর ইকবাল।

কক্সবাজারে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রোজিনা বলেন, ‘৩৪ বছর আগে এখানে জাফর ইকবালের সঙ্গে একটি ছবির শুটিং করেছিলাম। আজ এত বছর পর এখানে এসে তাঁর কথা খুব মনে পড়ছে।’

পুরোনো সহশিল্পীকে স্মরণ করে তিনি আরও বলেন, ‘জাফর ছিল দুর্দান্ত একজন মানুষ ও সহশিল্পী। তাঁর সঙ্গে কাটানো দিনগুলো কখনো ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।’

রোজিনার এই আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। অনেকেই বলেছেন, সময় যতই পেরিয়ে যাক, কিছু স্মৃতি ও মানুষ চিরকাল হৃদয়ে গেঁথে থাকে।
বাংলা সিনেমার প্রখ্যাত অভিনেত্রী রোজিনা সর্বশেষ ১৯৯১ সালে শুটিং করতে গিয়েছিলেন কক্সবাজারে। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ ৩৪ বছর। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবারও পৌঁছেছেন সাগরপাড়ের এই শহরে। তবে এবার রোজিনার সফরটা ছিল একটু ভিন্ন—আকাশপথ নয়, তিনি বেছে নিয়েছেন ট্রেনযাত্রা।

অবকাশযাপন আর কিছু ফটোশুটের কাজ নিয়ে কক্সবাজারে কয়েকদিন অবস্থান করবেন তিনি। শহরে পৌঁছে হোয়াটসঅ্যাপে একান্ত আলাপে জানান, এত বছর পর ফিরে এসে যেমন আনন্দে আপ্লুত হয়েছেন, তেমনি কিছুটা মন খারাপও করেছে তাঁর।

রোজিনা বলেন, ‘যে জায়গাগুলোতে আগে শুটিং করেছি, সেগুলো এখন খুঁজে পাচ্ছি না। কক্সবাজার অনেক বদলে গেছে। হোটেল, রিসোর্ট আর আধুনিক অবকাঠামোয় সবকিছু নতুন মনে হচ্ছে। পরিবর্তন হবে জানতাম, কিন্তু এতটা হবে ভাবিনি। পরিচিত জায়গাগুলোর স্মৃতি যেন হারিয়ে গেছে।’

এই সফরের বিশেষ দিক ছিল তাঁর ট্রেনভ্রমণ। উত্তরা থেকে সরাসরি ট্রেন ধরার সুবিধা নিয়েই প্রথমবারের মতো রেলে কক্সবাজার যাত্রা করেন তিনি। রোজিনা জানান, ‘বাসার পাশেই স্টেশন, ভাবলাম এবার ট্রেনেই যাই। এসি কামরায় ভীষণ আরাম লেগেছে। জানালার পাশে বসে প্রকৃতি দেখেছি, নদী-খাল-পুকুর—সব মিলিয়ে মন ছুঁয়ে গেছে।’

ট্রেন যাত্রাপথে অনেকে তাঁকে চিনে আবেগে ভেসেছেন, কেউ কেউ তাঁর পুরোনো সিনেমার স্মৃতিচারণাও করেছেন। বিকেলে কক্সবাজার স্টেশনে নেমেই তাঁর মনে হয়েছে, ‘এত লম্বা ভ্রমণের পরও ক্লান্তি নেই। স্টেশনটা খুব সুন্দর করে সাজানো, দেখে ভালোই লেগেছে।’

একদিকে স্মৃতির টান, অন্যদিকে নতুন অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে রোজিনার এবারের কক্সবাজার সফর হয়ে উঠেছে এক অন্যরকম উপলব্ধির গল্প।
নব্বইয়ের দশকে কক্সবাজার ছিল চিত্রনায়িকা রোজিনার শুটিংয়ের নিয়মিত গন্তব্য। প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো সিনেমার কাজে সেখানে যেতেন তিনি। অসংখ্য ব্যবসাসফল ছবির স্মৃতি জড়িয়ে আছে সাগরপাড়ের শহরটির সঙ্গে। তাই দীর্ঘ ৩৪ বছর পর আবার কক্সবাজারে গিয়ে আবেগে ভেসেছেন এই বরেণ্য অভিনেত্রী।

রোজিনা বলেন, ‘সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে শুটিং মানেই কক্সবাজার। কত দিন-রাত কেটেছে শুটিংয়ে, কত আড্ডা, কত স্মৃতি। আজ সব মনে পড়ে যাচ্ছে। সেই সোনালি সময়গুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠছে।’

তবে কক্সবাজার শুধু কাজের জায়গাই নয়, কিছু ব্যক্তিগত কষ্টের স্মৃতিও বহন করে। ১৯৯১ সালে এখানেই তাঁর শেষ শুটিং হয়েছিল, যেখানে সহশিল্পী ছিলেন জাফর ইকবাল। ঢাকায় ফিরে কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান এই জনপ্রিয় নায়ক। সে স্মৃতি মনে করে রোজিনা বলেন, ‘একসঙ্গে কাজ করলাম, আমার আগেই ঢাকায় ফিরলেন। কিছুদিন পর শুনলাম, হাসপাতালে ভর্তি, তারপর আর নেই। এটা যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না।’

রোজিনার চলচ্চিত্রজীবনে বড় এক বিরতি আসে ১৯৯৬ সালে। তখন সবকিছু ছেড়ে চলে যান লন্ডনে। রোজিনা জানান, ‘অভিনয় করতে করতে একসময় ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ৯১ সালের দিকেই সিদ্ধান্ত নিই নতুন কোনো কাজ আর করব না। যেগুলোর শুটিং বাকি ছিল, সেগুলো শেষ করে চলে যাই।’

দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৬ সালে ফেরদৌসের বিপরীতে ‘রাক্ষুসী’ ছবিতে ফিরে আসেন। আর ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ‘ফিরে দেখা’ চলচ্চিত্র দিয়ে। এখন তাঁর পরিকল্পনা আরও নির্মাণ ও প্রযোজনার দিকে সময় দেওয়ার।

চলচ্চিত্র নিয়ে আগামীর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে রোজিনা বলেন, ‘আমি তো সিনেমার মানুষ। এখানেই থাকতে চাই। ভালো কিছু কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে সবাইকে জানাব।’

এদিকে এবারের ঈদে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সাফল্যে আশাবাদী তিনি। তবে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন, ‘বছরে এক-দুটি সিনেমা হিট করলেই হবে না। ইন্ডাস্ট্রিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে পাঁচ থেকে সাতটি ভালো ব্যবসাসফল ছবি প্রয়োজন।’

প্রিয় শহর, পুরোনো স্মৃতি আর নতুন আশায় আবারও চলচ্চিত্রের ছন্দে ফিরতে চাচ্ছেন রোজিনা—কক্সবাজারের সৈকতে দাঁড়িয়ে যেন আরও একবার ফিরে দেখছেন নিজের সিনেমাজীবনের গল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *