
বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক সংকট বা আঘাতের ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। বিশ্বব্যাংক আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যেই প্রায় ৩০ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণিতে চলে যেতে পারেন।
‘টোকা’ দিলেই দারিদ্র্যসীমার নিচে!
বিশ্বব্যাংকের দারিদ্র্য মাপকাঠি অনুযায়ী, ক্রয়ক্ষমতার সমতা (PPP) অনুসারে দৈনিক ২.১৫ ডলারের নিচে আয় করলে কোনো ব্যক্তি ‘অতিদরিদ্র’ হিসেবে বিবেচিত হন। বাংলাদেশে এ ধরনের আয় সীমার একটু ওপরে থাকা মানুষের সংখ্যা বিপুল। অর্থাৎ, আয় সামান্য কমলেই তারা দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যান। অনেক পরিবার এমন অবস্থায় রয়েছে, যাঁরা বছরে মাত্র দুই দিন কাজ না পেলে গরিব হয়ে পড়েন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই অবস্থা অনেকটা এমন যে—বাংলাদেশে ‘টোকা’ দিলেই অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যান। কোনো অসুস্থতা, দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে তা সামাল দেওয়ার মতো অর্থনৈতিক সুরক্ষা কোটি কোটি পরিবারে নেই।
মজুরি বাড়েনি, দাম বেড়েছে
বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের প্রকৃত মজুরি টানা ৩৯ মাস ধরে কমছে। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেভাবে হয়েছে, সে তুলনায় মজুরি বাড়েনি। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি হলেও দারিদ্র্য কমবে না
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পূর্বাভাস বলছে, চলতি অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশের আশেপাশে হতে পারে। তবে এই প্রবৃদ্ধির সুফল সাধারণ মানুষের দারিদ্র্য বিমোচনে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
এদিকে শ্রমবাজারেও আশাব্যঞ্জক কোনো লক্ষণ নেই। কৃষি খাতে মজুরি কম থাকায় শিল্পখাতে শ্রমশক্তি স্থানান্তরের গতি ধীর। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগও পর্যাপ্ত হারে বাড়ছে না।
‘অর্থনীতিতে গতি আনা জরুরি’
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “যখন প্রবৃদ্ধি মন্থর এবং মূল্যস্ফীতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন গরিব মানুষের সংখ্যা বাড়ে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনের দিনে অর্থনীতির গতি না বাড়লে এবং সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার না করলে বাংলাদেশে দারিদ্র্য পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নিতে পারে।