ভারত পাকিস্তানের ওপর কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তা কী?

ভারত পাকিস্তানের ওপর কোন কোন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে তা কী?
পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফারাবাদের ভারতের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিলাল মসজিদের একাংশ। ৭ মে, ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি অনুযায়ী, তারা সশস্ত্র গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) এবং জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম)-এর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শিবিরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করেছে। তাদের মতে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ভাওয়ালপুরে জেইএম-এর একটি ঘাঁটি এবং মুরিদকে শহরে এলইটি’র আস্তানাসহ মোট নয়টি স্থাপনায় হামলা চালানো হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানায়, ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের ছয়টি স্থানে আঘাত হানে—যার মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের শিয়ালকোট, ভাওয়ালপুর ও মুরিদকে এবং পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত আজাদ কাশ্মীরের মুজাফ্ফারাবাদ, বাগ ও কোটলি এলাকা।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযানে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত প্রযুক্তির ও নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম অস্ত্র। তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভারতীয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী একযোগে এই হামলা চালায়। লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটি, যাতে পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

এই অভিযানে স্কাল্প ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র, হ্যামার প্রিসিশন-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এবং আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহৃত হয়।

স্কাল্প ক্রুইজ ক্ষেপণাস্ত্র কী ?

স্কাল্প ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, যা ‘স্টর্ম শ্যাডো’ নামেও পরিচিত, একটি দূরপাল্লার আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য অস্ত্র। এটি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে গভীরভাবে আঘাত করার জন্য। ইউরোপের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান MBDA এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। মূলত, এটি সুরক্ষিত বাঙ্কার বা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়।

প্রায় ১,৩০০ কেজি ওজনের এই মিসাইল আধুনিক যুদ্ধবিমান, যেমন রাফাল, থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য। ভারতীয় বিমান বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার ফলে এই অস্ত্র ভারতের আকাশপথে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এটি রাডার এড়িয়ে শত্রুপক্ষের ভেতরে গভীরে ঢুকে আঘাত হানতে পারে, বিশেষ করে পূর্ব-পরিকল্পিত সামরিক অভিযানে কৌশলগত লক্ষ্যবস্তু ধ্বংসে এটি খুবই কার্যকর।

ভারতের পাশাপাশি ইরাক, লিবিয়া এবং সিরিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে এই মিসাইল ব্যবহার করা হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে ইউক্রেনকেও এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা হয়, যার ফলে ইউক্রেনীয় বাহিনীর রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত এলাকায় গভীর আক্রমণ চালানোর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

হ্যামার প্রিসিশন–গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র কী ?

হ্যামার (HAMMER), যার পূর্ণরূপ Highly Agile Modular Munition Extended Range, একটি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এটি ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান Safran Electronics & Defense দ্বারা তৈরি।

মধ্যম পাল্লার এই অস্ত্রটি স্থির এবং চলমান—উভয় ধরনের লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এর মডুলার ডিজাইন ও উচ্চ গতিশীলতা এটিকে বিশেষভাবে কার্যকর করে তোলে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধপরিস্থিতিতে।

আত্মঘাতী ড্রোন কী ?

আত্মঘাতী ড্রোন, যাকে সাধারণভাবে ‘কামিকাজি ড্রোন’ বলা হয়, একধরনের একবার ব্যবহারযোগ্য অস্ত্র যা নজরদারি, লক্ষ্য নির্ধারণ এবং সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

এই ড্রোনগুলো লক্ষ্যবস্তুর আশেপাশে ঘুরতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নির্ধারিত লক্ষ্যে নিজেকে বিস্ফোরিত করে আঘাত হানে। ফলে এটি হামলার পাশাপাশি নজরদারি ও টার্গেট কনফার্মেশনের কাজেও ব্যবহৃত হয়।

এই প্রযুক্তি মূলত দ্রুত প্রতিক্রিয়া, উচ্চ নির্ভুলতা এবং স্বল্প ব্যয়ে কার্যকর হামলার জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *