টিউলিপের বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাটের মালিকানা স্থানান্তরের অভিযোগ।

টিউলিপের বিরুদ্ধে জাল স্বাক্ষর ব্যবহার করে বোনের নামে ফ্ল্যাটের মালিকানা স্থানান্তরের অভিযোগ।
টিউলিপ সিদ্দিক , ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি ও যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঢাকার পূর্বাচলে সরকারি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ এনেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদকের দাবি অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক নিজের ও পরিবারের সদস্যদের জন্য পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেন। দুদক আরও অভিযোগ করেছে, তিনি বোনের নামে ঢাকার গুলশানের একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করেন, যেখানে এক আইনজীবীর জাল স্বাক্ষর ছিল।

এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিউলিপ সিদ্দিক চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘সিটি মিনিস্টার’ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ-সংক্রান্ত দুর্নীতির বৃহত্তর তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিকসহ শেখ হাসিনার পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদকের মতে, আইন লঙ্ঘন করে শেখ হাসিনা ও তাঁর স্বজনেরা সরকারি জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, “এটি হিমশৈলের চূড়ামাত্র। বর্তমানে দুদকের তদন্তাধীন আরও অনেক অভিযোগ রয়েছে, যা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের জড়িত দুর্নীতি প্রকাশ করবে।”

দুদক আরও দাবি করেছে, পূর্বাচলের নিউ টাউন প্রকল্পের ৬০ কাঠা (প্রায় এক একর) সরকারি জমি অবৈধভাবে শেখ হাসিনা, তাঁর সন্তান ও পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তদন্তকারীদের মতে, ঢাকায় টিউলিপ সিদ্দিকের মালিকানায় ইতোমধ্যে আরেকটি সম্পত্তি থাকায় পূর্বাচলে জমি পাওয়ার যোগ্যতা তাঁর ছিল না। তবে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিয়ম লঙ্ঘন করে প্লট বরাদ্দ নেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযোগ, টিউলিপ সিদ্দিক ভুয়া নোটারি নথি ব্যবহার করে তাঁর বোন আজমিনা সিদ্দিকের নামে ঢাকার গুলশান এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিকানা হস্তান্তর করেছিলেন।

দুদকের দাবি, ওই নথিতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গাজী সিরাজুল ইসলামের সিল ব্যবহার করা হলেও স্বাক্ষরটি তাঁর নয়। সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি শুধুমাত্র নিজের আইনি চেম্বারে বসেই নোটারি করেন এবং টিউলিপ বা আজমিনা সিদ্দিকের সঙ্গে তাঁর কোনো পূর্বপরিচয় নেই।

এই নথিটি ছিল একটি হেবা দলিল, যা ইসলামী আইনে সম্পত্তি উপহার দেওয়ার স্বীকৃত পদ্ধতি। ২০১৫ সালে এটি প্রস্তুত করা হয়, তখন টিউলিপ সিদ্দিক লেবার পার্টির এমপি ছিলেন, তবে মন্ত্রিত্ব পাননি। দুদকের অভিযোগ, ফ্ল্যাটের প্রকৃত মালিকানা গোপন রাখার উদ্দেশ্যে এই ভুয়া নোটারি দলিল তৈরি করা হয়েছিল।

তবে টিউলিপ সিদ্দিকের একজন মুখপাত্র এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, “এই অভিযোগগুলোর পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো যোগাযোগও করা হয়নি এবং তিনি এসব দাবি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *