
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে অন্তর্ভুক্ত না করে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায়ও বর্তমানে আরাকান আর্মি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ফরেন সার্ভিস ডে’ উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে সংকটের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থানকে ‘দ্বিধাগ্রস্ত’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা বর্তমানে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে, এবং এই গোষ্ঠী প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার অগ্রগতিতে একটি বড় বাধা।
তিনি আরও বলেন, আরাকান আর্মি মিয়ানমার রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃত অংশ নয়, এমনকি আন্তর্জাতিকভাবেও তাদের স্বীকৃতি নেই। সে কারণে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা সম্ভব নয়। তবুও কোনো না কোনোভাবে এই সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত না করে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জোর দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না থাকলেও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বাস্তব উপস্থিতি ও প্রভাব রোহিঙ্গা সংকটের যেকোনো সামগ্রিক সমাধানে তাদের সম্পৃক্ততাকে অনিবার্য করে তুলেছে।
আলোচনা সভায় তিনি আরও জানান, লাখ লাখ প্রবাসীর উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলো, বিশেষ করে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসগুলোতে জনবল বৃদ্ধির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, “আমরা মানবসম্পদ বাড়ানোর প্রচেষ্টা শুরু করেছি, বিশেষ করে কনস্যুলার পদগুলোতে। আশা করছি, এ প্রচেষ্টার ফলে অন্তত আংশিক সফলতা মিলবে।”
তিনি জানান, প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, তার প্রায় ৮০ শতাংশই অভিবাসনের আগে দেশের অভ্যন্তরে ঘটে, বাকি ২০ শতাংশ ঘটে বিদেশে পৌঁছানোর পর। তবুও, বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে শতভাগ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, বিদেশে মিশনের ওপর চাপ কমাতে অভিবাসন-পূর্ব ধাপেই দেশের ভেতরে সমস্যাগুলোর সমাধানে জোর দিতে হবে। সীমিত জনবল ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ মিশনগুলো বিশ্বজুড়ে এক কোটির বেশি প্রবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সৌদি আরবের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সেখানে প্রায় ৩২ লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। সেখানে একটি মিশনের মাত্র ৫০ জন কর্মকর্তা এত বড় জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তাই তিনি দেশ থেকে অভিবাসনের আগে পর্যায়ে পদ্ধতিগত সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানান।
প্রবাসীদের দেশের অর্থনীতিতে অবদানের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিদেশে মিশনের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে প্রবাসীদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে।