পাকিস্তান যাচ্ছে না ভারতের বিশ্বকাপে, চাপের মুখে বিসিসিআই

এবার ভারতে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না পাকিস্তান, বেকায়দায় বিসিসিআই
বাছাই পর্ব উতরে ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান ছবি: পিসিবি

নারী বিশ্বকাপে পাকিস্তানের যোগ্যতা অর্জন, চাপে ভারত!

নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে টানা তিন জয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নিয়েছে পাকিস্তান নারী দল। লাহোরে অনুষ্ঠিত ম্যাচে থাইল্যান্ডকে ৭৮ রানে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে ফাতিমা সানার নেতৃত্বাধীন দলটি।

এই জয় শুধু মাঠের পারফরম্যান্সেই নয়, কূটনৈতিক দিক থেকেও বড় এক বার্তা বহন করছে। পাকিস্তান সরকার ও ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) দীর্ঘদিন ধরে এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। কারণ, এবার বিশ্বকাপে অংশ নিতে হলে ভারতকে পাকিস্তানে খেলতে যেতে হতে পারে—যা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই-এর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আইসিসি ইভেন্টে অংশগ্রহণ নিয়ে দুই দেশের বোর্ডের পূর্ববর্তী টানাপোড়েন ও অবস্থান মিলিয়ে এটি এখন এক উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি। অনেকেই বলছেন, এটি যেন মাঠে নয়, কূটনৈতিকভাবেই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের জন্য একপ্রকার জবাব।

চূড়ান্ত পর্বে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ায় এবার নজর থাকবে বিসিসিআই ও আইসিসির সিদ্ধান্তের দিকে—ভারত কি পাকিস্তানে খেলতে যাবে, নাকি সমঝোতার কোনো নতুন পথ খুঁজবে দুই পক্ষ?

পাকিস্তানে খেলেছে সবাই, তবু নিরাপত্তার অজুহাতে যায়নি শুধু ভারত

২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় আসরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো উন্নত দেশগুলো নির্বিঘ্নে পাকিস্তানে গিয়ে অংশ নিয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানের দলও পাকিস্তানে গিয়ে খেলে এসেছে স্বাভাবিকভাবেই।

তবে ব্যতিক্রম শুধু ভারত। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজাদের পাকিস্তানে না পাঠানোর পেছনে ভারত সরকার নিরাপত্তা-শঙ্কার কথা বলে এলেও, মূল কারণ যে রাজনৈতিক বৈরিতা—তা এখন ওপেন সিক্রেট।

শেষ পর্যন্ত বিসিসিআই-এর চাপে পিসিবি বাধ্য হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন করে হাইব্রিড মডেলে—যেখানে ভারতের ম্যাচগুলো নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বারবার নিরাপত্তা-জুজু তুলে পাকিস্তানে না যাওয়ার প্রবণতা কেবল ক্রীড়াঙ্গনের সৌহার্দ্য নষ্ট করছে না, বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বাড়তি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। এখন দেখার বিষয়, মেয়েদের বিশ্বকাপ নিয়েও কি আবার সেই পুরোনো পথেই হাঁটে ভারত?

পাকিস্তান যাচ্ছে না ভারতের বিশ্বকাপে, চাপের মুখে বিসিসিআই
সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানকে দুবাইয়ে গিয়ে ভারতের বিপক্ষে খেলে আসতে হয়েছে

হাইব্রিড মডেলেই নারী বিশ্বকাপ, পাকিস্তান দল খেলবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে

চুক্তির ছক ধরে এবারও ‘হাইব্রিড মডেলেই’ খেলতে হবে পাকিস্তান নারী দলকে। ২০২৫ নারী বিশ্বকাপে, যেখানে মূল আয়োজক ভারত, সেখানে ফাতিমা সানা ও মুনিবা আলীদের মাঠে নামতে হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে।

২০২৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময়ও এমনই হয়েছিল। পাকিস্তান আয়োজক হওয়া সত্ত্বেও রোহিত-কোহলিদের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল সব ম্যাচ খেলেছিল দুবাইয়ে। এমনকি বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান ও শাহীন আফ্রিদিদেরও দুবাইয়ে গিয়ে ম্যাচ খেলতে হয়েছিল ভারতীয় দলের বিপক্ষে। ভারত ফাইনালে উঠায় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচটিও লাহোর থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছিল দুবাইয়ে।

এবারও সেই চিত্রেরই পুনরাবৃত্তি। নারী বিশ্বকাপের ত্রয়োদশ আসর আগামী সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে ভারতের মাটিতে খেলবে না পাকিস্তান নারী দল। ফলে হারপ্রীত কৌর, স্মৃতি মান্ধানাদের বিপক্ষে ম্যাচগুলো হবে নিরপেক্ষ কোনো দেশে।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বিসিসিআই-এর চাপের মুখে পাকিস্তান ছাড় দিলেও এবার আর তা করতে নারাজ পিসিবি। বোর্ড প্রধান মহসিন নাকভি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এবারের বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের জন্য কোনো বাড়তি সুবিধা বা ছাড় থাকবে না।

এই পরিস্থিতিতে নারী বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ যেমন চড়ছে, তেমনি রাজনৈতিক উত্তেজনাও ছায়া ফেলছে বিশ্ব ক্রিকেটে।

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে আইসিসির হাইব্রিড সমাধান, নিরপেক্ষ ভেন্যুতেই বিশ্বকাপ ম্যাচ

বিশ্বকাপে ভেন্যু নির্ধারণ নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের শেষ পরিণতি—হাইব্রিড মডেল। শেষ পর্যন্ত একমত হতে না পারায়, ভারত বা পাকিস্তানের যে কোনো একটি দল টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে আইসিসি মুখোমুখি হতো বড় আর্থিক ক্ষতির। তাই সমাধান হিসেবে দুই দেশের বোর্ডকে রাজি করিয়ে হাইব্রিড মডেলেই এগোয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বিসিসিআই ও পিসিবির মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিপত্রে পরিষ্কার বলা আছে—যেহেতু ভারত পাকিস্তানে খেলতে যাবে না, সেহেতু ২০২৭ সালের আগে ভারতে আয়োজিত কোনো বৈশ্বিক আসরেও খেলবে না পাকিস্তান। এর আওতায় পড়ছে ২০২৫ নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

২০২৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজন করছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা যৌথভাবে। তাই সেই আসরে পাকিস্তান পুরুষ দল তাদের সব ম্যাচ খেলবে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের একক আয়োজক ভারত, ফলে পাকিস্তান নারী দলের সব ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে নিরপেক্ষ ভেন্যুতে—সম্ভাব্যত মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা বা আরব আমিরাতে।

এই সিদ্ধান্ত আইসিসির জন্য বড় সমাধান হলেও, ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি হতাশার বিষয়। কারণ, বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের উত্তেজনা যতটা মাঠে, তার চেয়েও বড় হয়ে উঠছে মাঠের বাইরের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পাকিস্তানের মেয়েরা ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ায় বিসিসিআই এরই মধ্যে লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

পাকিস্তান যাচ্ছে না ভারতের বিশ্বকাপে, চাপের মুখে বিসিসিআই
নিরপেক্ষ ভেন্যুতে পাকিস্তান নারী দলের ম্যাচ আয়োজন করতে হবে বিসিসিআইকে ছবি: পিসিবি

নিরপেক্ষ ভেন্যুতে পাকিস্তানের নারী দলের ম্যাচ, বাড়তি খরচে পড়বে বিসিসিআই

পাকিস্তান নারী দলের ম্যাচ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে আয়োজন করতে গেলে বিসিসিআইকে বাড়তি খরচ বহন করতে হবে। যাতায়াত, আবাসন সুবিধা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সম্প্রচারসহ নানা কারণে বিসিসিআইকে বেশিরভাগ খরচের দায়িত্ব নিতে হবে। পাকিস্তানের কোনো অভিযোগ যাতে না থাকে, সে জন্য বিসিসিআই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।

ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএনক্রিকইনফো জানিয়েছে, ২০২৫ নারী বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো ভারতের পাঁচটি শহরে অনুষ্ঠিত হবে—মুল্লানপুর, রায়পুর, ইন্দোর, তিরুবনন্তপুরম এবং বিশাখাপট্টনম। ফাইনালটি ২৬ অক্টোবর মুল্লানপুরের মহারাজা যাদবীন্দ্র সিং আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা।

তবে, চুক্তি অনুযায়ী, যদি পাকিস্তান নারী দল সেমিফাইনাল বা ফাইনালে পৌঁছে, তবে সেই ম্যাচগুলোও ভারতের বাইরে, অর্থাৎ নিরপেক্ষ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এতে ভারতের জন্য বাড়তি খরচ এবং জটিলতা তৈরি হবে, যা তাদের জন্য নতুন এক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠবে।

রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে বিশ্বকাপে অংশ নিতে চলা ৮ দলের সবাই সবার সঙ্গে একবার করে মুখোমুখি হবে। সেই হিসেবে নকআউট পর্বের আগেই ভারত-পাকিস্তান একবার মুখোমুখি হবে। সেই হারমানপ্রীত-মান্ধানাদের সেই ম্যাচটিও দেশের বাইরে গিয়ে খেলে আসতে হবে।

বিসিসিআই কোনো কারণে এ চুক্তি না মানলে পিসিবি আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের মামলা করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *