রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা করে অস্থিরতা তৈরির একটি পরিকল্পনার কথা উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে ছিলেন বহুল আলোচিত অপরাধী সুব্রত বাইন এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদ। তাদের লক্ষ্য ছিল বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক সংকট তৈরি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করাই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই ষড়যন্ত্রে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাবেক নেতার সংশ্লিষ্টতার কথাও উঠে এসেছে।
অর্থের জোগান আসে প্রতিবেশী একটি দেশ থেকে, হুন্ডির মাধ্যমে। সেই অর্থে সুব্রত বাইন তার বাহিনীকে সংগঠিত করে বিভিন্ন এলাকায় কিলার এবং অস্ত্রধারীদের প্রস্তুত করছিলেন। সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গ্রেফতার ও হস্তান্তরের পর গোয়েন্দা হেফাজতে তাদের দেওয়া জবানবন্দিতে বেরিয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রিমান্ডে চারজন, আদালতে বিস্ফোরক বক্তব্য
মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে তোলা হয় সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, শ্যুটার আরাফাত ও এমএএস শরীফকে। আদালত সুব্রত বাইনের আটদিন এবং অন্যদের ছয়দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আদালতে হাজিরের সময় কঠোর নিরাপত্তায় তাদের আনা হয়। কাঠগড়ায় তোলা হলে সুব্রত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সত্য লিখবেন, যা বলি তাই লিখবেন।” তিনি দাবি করেন, তাকে ২০২২ সালে আয়না ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছিল। নিজের প্রাণরক্ষার জন্যই তিনি অস্ত্র বহন করতেন বলে জানান।
গোয়েন্দা তথ্য: বড় পরিকল্পনা ছিল পেছনে
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, অস্ত্র ও অর্থ সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তরুণ সন্ত্রাসীদের মাঝে বিতরণ করাই ছিল তাদের পরবর্তী ধাপ। শ্যুটার আরাফাত ও শরীফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেরিয়ে আসে অস্ত্র সীমান্ত এলাকা থেকে সংগৃহীত হয়ে রাজধানীতে পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মগবাজার, শাহবাগ, গুলশান ও বাড্ডা এলাকায় সশস্ত্র ক্যাডার নিয়োগের পরিকল্পনা ছিল। এদের বেশিরভাগই উঠতি বয়সি ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।
অস্ত্র, অর্থ ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তারা চেয়েছিল হত্যাগুলোকে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের ফল হিসেবে উপস্থাপন করতে। এর ফলে রাজনৈতিক দূরত্ব বাড়িয়ে একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় রাখতে সুবিধা হতো।
হুন্ডির মাধ্যমে আসা টাকার উৎস ছিল মূলত যশোর, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ সীমান্ত। কুষ্টিয়ায় তাদের একটি ঘাঁটিও ছিল বলে জানা গেছে। সেখানে থেকে ঢাকায় শতাধিক অস্ত্র পাঠানো হয়।
সুব্রতের অবস্থান বদলের কারণ
গোয়েন্দাদের এক প্রশ্নের উত্তরে সুব্রত জানান, ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তাকে সন্ত্রাসীদের তালিকায় রাখা হয়, যার ফলে তিনি দেশ ছাড়েন। পরবর্তীতে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা তাকে ফিরিয়ে আনেনি। ৫ আগস্টের পর তিনি আবার চেষ্টা করেন, কিন্তু সাড়া না পেয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাদের সহায়তায় কাজ শুরু করেন।