নয়াদিল্লি হামলার আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিল, ভারতে চলছে উত্তেজনা ও আলোচনা।

নয়াদিল্লি হামলার আগে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছিল, ভারতে চলছে উত্তেজনা ও আলোচনা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর জানান, ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরুর পূর্বেই পাকিস্তানকে তথ্য প্রদান করা হয়েছিল। এই মন্তব্যের পর দেশের রাজনৈতিক জগতে তোলপাড় শুরু হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, হামলার পূর্বে সবকিছু জানিয়ে দিয়ে ভারতের নিরাপত্তা ও সেনাদের জীবনকে বিপদের মুখে ফেলা হয়েছিল। তিনি রাগ প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন, পূর্বে অবহিত করার কারণে পাকিস্তান কতটি বিমান ধ্বংস করেছে।

রাহুল গান্ধী সামাজিক মাধ্যমে এক্স-এ লেখেন, “হামলার আগে পাকিস্তানকে জানানো ছিল একটি গুরুতর ভুল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে ভারত সরকার এই কাজ করেছে। প্রশ্ন হলো, এর অনুমোদন কে দিয়েছেন? আর এর ফলে আমাদের বিমানবাহিনী কতগুলো বিমান হারিয়েছে?”

তিনি জয়শঙ্করের একটি ভিডিও-ও শেয়ার করেছেন, যেখানে দেখা যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন—পাকিস্তানে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোতে’ হামলার আগে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে একটি বার্তা পাঠায়। ভিডিওতে জয়শঙ্কর বলেন, “অপারেশন শুরুর সময় আমরা পাকিস্তানকে জানাই, ‘আমরা সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছি, পাকিস্তানি সেনাদের ওপর নয়।’ এর মাধ্যমে তাদের পেছনে সরে যাওয়ার এবং জড়িত না থাকার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আমাদের এই শুভবুদ্ধির প্রস্তাব গ্রহণ না করার পথই বেছে নেয়।”

তবে ভারতের সরকারি প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (পিআইবি) জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর যে পাকিস্তানকে হামলার আগে সরাসরি অবহিত করা হয়েছে—এমন কোনো বক্তব্য দেননি। সংস্থাটির দাবি, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে প্রচার করা হচ্ছে।

তবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে জয়শঙ্করকে স্পষ্টভাবে বলতে শোনা যায়, পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে অভিযানের আগে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদকে বার্তা দিয়েছিল। এ ছাড়া ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এখনো পর্যন্ত জয়শঙ্করের বক্তব্যের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বা প্রত্যাখ্যান আসেনি, যা বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আরও জোরদার করেছে।

নয়াদিল্লিভিত্তিক আম আদমি পার্টিও এই ইস্যুতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলের নেতা ও রাজ্যসভার সদস্য সঞ্জয় সিং একে ‘দেশদ্রোহিতার সামিল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “যখন একজন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে পাকিস্তানকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, তখন তা ভারতের সেনাবাহিনী ও দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার মতোই। এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন এবং একেবারেই ক্ষমার অযোগ্য।”

সঞ্জয় সিং আরও বলেন, “এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জবাব দেওয়া উচিত—প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দাবি করেছিলেন, তা কতটা সত্য। একই সঙ্গে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের বক্তব্য কতটা নির্ভরযোগ্য। পাকিস্তানকে আগে জানানো কেন প্রয়োজন হয়েছিল? এটি কি শীর্ষপর্যায়ের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল? ভারতের জনগণের এ বিষয়ে জানার অধিকার আছে। মোদি সরকারকে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে তারা দেশের সশস্ত্র বাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কি না। এর পরেই বিরোধীরা বিষয়টি জনগণের সামনে তুলবে এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *