
বিশ্ববাজারে বাড়ছে সোনার দাম, ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাব
বিশ্ববাজারে সোনার দাম অব্যাহতভাবে বাড়ছে। আজ শনিবার প্রতি আউন্স সোনার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৮৬.৫ ডলার, যা আগের দিনের তুলনায় ৬.৮৭ ডলার বেশি। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের শুল্কনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে এই ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ছিল ২,৯৪৭.৯০ ডলার। গত ৩০ দিনে বিশ্ববাজারে ৬৩.১৪ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৯ দিনেই ৫৮ ডলার বেড়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশ, ভারতসহ অন্যান্য দেশের বাজারেও পড়ছে।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ার কারণ: ট্রাম্পের শুল্কনীতি, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা
বিশ্ববাজারে সোনার দাম বৃদ্ধির পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। এর মধ্যে অন্যতম হল ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ এবং শুল্কযুদ্ধের আশঙ্কা। এসব কারণে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে, যার প্রভাব সোনার দাম বৃদ্ধিতে পড়ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগ হিসেবে অনেকে শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি তুলে সোনা কেনার দিকে ঝুঁকছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি বলেছেন, চলমান ভূ–অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ তাঁদের অর্থ ব্যবস্থাপনা নিয়ে শঙ্কিত। এই পরিস্থিতিতে তাঁর ধারণা, মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছেন, ফলে সোনার দাম বাড়বে।
এছাড়া, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং পাল্টা হিসেবে অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করতে পারে, যার ফলে ওই দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা তৈরি হবে। এসব কারণে মানুষ সোনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মনে করেন জো কাভাতোনি।
সোনার ব্যবহার ও মূল্যবৃদ্ধি: বিশ্বব্যাপী প্রবণতা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা
সোনার ব্যবহার কেবল গয়নার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বর্তমানে এটি আর্থিক সুরক্ষার একটি অন্যতম উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার রিজার্ভও বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা সোনার বার ও সোনাভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড (ইটিএফ)–এ বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে সারা বিশ্বে সোনার বেচাকেনা হয়েছে ৪ হাজার ৯৭৪ টন। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা কেনা বেড়েছে, এবং ২০২৪ সালে তা টানা তৃতীয় বছর এক হাজার টনের বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর সবচেয়ে বেশি সোনা কিনেছে পোল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, তারা কিনেছে ৯০ টন সোনা।
গোল্ড প্রাইস ডট অর্গ–এর তথ্যানুসারে, গত ছয় মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৩৯৬.১৫ ডলার। এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৮২২.৮৩ ডলার, তবে পাঁচ বছরে দাম কমেছে ১,৪৯৩.৮৮ ডলার। গত ২০ বছরে সোনার দাম বেড়েছে ২,৫৩৮.৪২ ডলার।
দেশে সোনার দামও বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো ও কমানো হয়। সর্বশেষ ৮ মার্চ দেশের বাজারে সোনার দাম কমানো হয়, এবং সেই দফায় ভরিতে দাম কমানো হয়েছিল ১,০৩৮ টাকা। এর ফলে প্রতি ভরি সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬২ টাকা।
ভারতের বাজারে সোনার দাম বর্তমানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। জিএসটি (জুডিশিয়াল সার্ভিস ট্যাক্স) প্রবর্তনের পর সোনার দাম ৯০ হাজার রুপি পার করে গেছে।