- বর্তমানে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।
- এ দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশিদের খরচ বেড়েছে ১৫ কোটি টাকা।

দেশে–বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ভাটা, বেড়েছে বিদেশিদের খরচ
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ভেতরে ও বিদেশে—দুই জায়গাতেই কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে প্রায় ৫.৩৮ শতাংশ হ্রাস। একই সময়ে বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা বা প্রায় ১৬ শতাংশ।
তবে উল্টো চিত্র দেখা গেছে বিদেশিদের ক্ষেত্রে। ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে জানুয়ারির তুলনায়। জানুয়ারিতে যেখানে তাদের খরচ ছিল ২৫৩ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ, এক মাসে খরচ বেড়েছে ১৫ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক লেনদেনের কড়াকড়ি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও মিতব্যয়ী নীতিই বাংলাদেশি কার্ডধারীদের খরচ কমার অন্যতম কারণ হতে পারে।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে ধীরগতি, দেশে–বিদেশে কমেছে বাংলাদেশিদের খরচ
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের ভেতরে ও বিদেশে দুই জায়গাতেই কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা, যা জানুয়ারির ৩১৩ কোটি টাকার তুলনায় ১৬ কোটি টাকা কম — শতকরা হিসাবে ৫ শতাংশের বেশি হ্রাস।
বিদেশে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ হয়েছে ৩৮৪ কোটি টাকা, যেখানে জানুয়ারিতে খরচ হয়েছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে বিদেশে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা, হ্রাসের হার ১৬ শতাংশেরও বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোর বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রবণতায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
এছাড়া, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। একইসঙ্গে, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট কার্ডধারীরাই। অর্থাৎ ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন এখন অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রনির্ভর হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও অভ্যন্তরীণ মিতব্যয়ী প্রবণতা এই কমতির পেছনে ভূমিকা রাখছে।
ভারতে কমছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ছে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের খরচ — চাহিদা বাড়ছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়
বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারচিত্রে বড় পরিবর্তন এসেছে গেল সাত মাসে। এক সময় যেখানে ভারতে সবচেয়ে বেশি খরচ হতো, এখন সেই স্থান দখল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করেছেন সর্বোচ্চ ৫২ কোটি টাকা। যদিও জানুয়ারিতে এই পরিমাণ আরও বেশি ছিল। বিপরীতে, ফেব্রুয়ারিতে ভারতে খরচ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৯ কোটি টাকায়, যা জানুয়ারিতে ছিল ৩৩ কোটি টাকার মতো। অথচ ২০২৪ সালের জুনে ভারতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ ছিল ৯২ কোটি টাকা, তখন যুক্তরাষ্ট্রে খরচ হয়েছিল ৭৭ কোটি টাকা।
এই তুলনামূলক পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, ভারত শীর্ষস্থান থেকে সরে গিয়ে এখন নেমে এসেছে ষষ্ঠ স্থানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, গত বছরের আগস্টে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারত বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদানে কড়াকড়ি আরোপ করে, যার ফলে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য ভারতে যাতায়াত কমে গেছে। এ কারণেই ভারতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে এই হ্রাস দেখা যাচ্ছে।
এই পরিবর্তিত বাস্তবতায় বাংলাদেশের নাগরিকদের চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। ফেব্রুয়ারিতে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা, যদিও জানুয়ারিতে তা ছিল ৬৪ কোটি। সিঙ্গাপুরেও খরচ বেড়েছে সামান্য — জানুয়ারির ৩৮ কোটি থেকে ফেব্রুয়ারিতে দাঁড়িয়েছে ৩৯ কোটিতে।
ব্যাংকাররা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাসটি ছোট হওয়ায় (২৮ দিন) মাসিক খরচ কিছুটা কমেছে। তাছাড়া ক্রেডিট কার্ডের সুদহার বাড়ায় অনেক গ্রাহক খরচের ব্যাপারে আরও সতর্ক হয়েছেন।
সব মিলিয়ে, বিদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভোক্তাপর্যায়ে বড় ধরনের স্থানান্তর লক্ষ্য করা যাচ্ছে — ভারতকেন্দ্রিকতা কমে গিয়ে এখন নজর যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর দিকে।