বিএনপিতে হচ্ছেন তিন মহাসচিব

সাংগঠনিক, আন্তর্জাতিক ও প্রশাসনিক বিষয়ক তিনটি মহাসচিব পদ তৈরি হচ্ছে ♦ জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠনতন্ত্রে যুক্ত হতে পারে কো-চেয়ারম্যান পদ

বিএনপিতে হচ্ছেন তিন মহাসচিব
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিতে তিনজন মহাসচিব দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে একজন সাংগঠনিক বিষয়ক মহাসচিব, একজন আন্তর্জাতিক বিষয়ক মহাসচিব এবং অন্যজন প্রশাসনিক বিষয়ক মহাসচিব হিসেবে কাজ করবেন। দলের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন কিংবা চেয়ারপারসনের গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতার অধীনে এদের নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যার মধ্যে কো-চেয়ারম্যান পদ যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে, এই পরিবর্তন শুধুমাত্র দলের জাতীয় সম্মেলন বা জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে করা হবে। এ বিষয়গুলোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং দলের হাইকমান্ডের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে, বিশেষ করে তারেক রহমান নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্যদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এছাড়া, ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হলে, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবনায় গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষত, শেখ হাসিনার সরকার বিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর নেতাদের মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে, যাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কোন নেতা কীভাবে মূল্যায়িত হবেন। কারা মনোনয়ন পাবেন বা মন্ত্রিত্ব পাবেন, এসব নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট নেতাদের পারফরম্যান্সের ওপর। দলের সব নেতার পারফরম্যান্স ইতোমধ্যে হাইকমান্ডের কাছে জমা পড়েছে, এবং বেশ কিছু উচ্চপর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, যারা পূর্বে হাসিনা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছে কিংবা দলের সঙ্গে বেইমানি করেছে, তাদের ব্যাপারেও পর্যালোচনা চলছে। এমন নেতাদের এবার কোনো অবস্থাতেই মনোনয়ন দেওয়া হবে না। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতিত মন্ত্রী বা চাটুকার প্রকৃতির লোকদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। এ কারণে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নতুন মুখের সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ত্যাগী নেতাদের বড় পদে নিয়োগ দিয়ে মূল্যায়ন

দলের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট, যেমন মহানগর, জেলা এবং উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন করার পাশাপাশি, ত্যাগী নেতাদের বড় পদে নিয়োগ দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলীয় গঠনতন্ত্র এবং চেয়ারপারসনের ক্ষমতাবলে, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি, যশোর জেলা বিএনপির সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য মরহুম তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগমকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে দলের দুর্দিনে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর, নেতা-কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তারা মনে করছেন, দলের দুর্দিনে অবদান রাখার পুরস্কার হিসেবে তাকে এই পদে নির্বাচিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াসিনকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আরও বেশ কিছু ত্যাগী নেতাকে বড় পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

তরুণ নেতাদের প্রাধান্য

সূত্রমতে, বিএনপি এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কমিটি গঠনের সকল স্তরে তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিচ্ছে। জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি থেকে শুরু করে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন, এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত সর্বত্র তরুণ নেতাদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। জেলা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তরুণ নেতৃত্বের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। ছাত্রদল এবং যুবদলের নেতাদেরই এসব কমিটিতে বেশি নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তারেক রহমান, দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণ নেতাদের ওপর নতুন দায়িত্ব বণ্টন করছেন এবং আগামী জাতীয় কাউন্সিলে এই পরিবর্তন আরও স্পষ্ট হবে।

এছাড়া, তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান সরাসরি বিএনপি রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব পেতে পারেন। তিনি ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ব্রেকফাস্ট প্রেয়ার’ এ অংশ নিয়েছেন তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে।

বিগত দেড় যুগ ধরে লন্ডনে থাকার কারণে, তারেক রহমান এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বেশিরভাগ নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত। তিনি জানেন, কোন নেতা কী অবস্থানে আছেন, এবং কোন নেতাকে কী দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তরুণ নেতাদের ওপর তার আস্থা রয়েছে এবং তিনি বিশ্বরাজনীতি ও দলের বাস্তবতা বিবেচনায় তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনছেন।

এছাড়া, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক এবং মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক হিসেবে রফিকুল আলম মজনুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সংগঠন শক্তিশালী ও চাঙা রাখতে প্রতিদিন কোনো না কোনো নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “নতুনদের স্থান করে দেওয়া পুরোনোদের কর্তব্য। পুরোনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের শ্রমের সমন্বয়ে দল ও দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।” একইভাবে, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদও তরুণ নেতাদের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

তারেক রহমান, দলের নেতৃত্বকে শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ করতে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন করছেন, এবং পুরোনো এবং নতুন নেতৃত্বের সমন্বয়ে ভবিষ্যতে বিএনপির একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব তৈরি করতে বদ্ধপরিকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *