
বিএনপি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে সংস্কারে ভূমিকা রেখেছে বলে মন্তব্য করেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, “অনেকে এখন নানা সংস্কারের কথা বলছেন, আমরা তাঁদের সমালোচনা করতে চাই না। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট—আমাদের সংস্কার উপস্থাপনার ধরন ও সময়ের সঙ্গে তাঁদের একটি পার্থক্য আছে। আমরা এখনই শুধু সংস্কারের কথা বলছি না, বরং শহীদ জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই বিএনপি দেশে সংস্কারের সূচনা করেছে। বাকশালের একদলীয় শাসন থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্রে রূপান্তর, খালেদা জিয়ার সময়ে প্রেসিডেন্সিয়াল পদ্ধতি থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় উত্তরণ—এসবই সেই ধারাবাহিক সংস্কারের অংশ। আমরা সব সময় পরিবর্তনের পথে থেকেছি।”
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুর জেলার নেতা-কর্মীদের নিয়ে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। পঞ্চগড় পৌরসভা চত্বরে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার আয়োজন করে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক কমিটি। দিনব্যাপী এই আয়োজনে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন এবং পরে তারেক রহমান তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, “দেশের যত ভালো কাজ হয়েছে, তার অন্তত ৭০ ভাগই বিএনপির হাত ধরে হয়েছে—এটা কোনো অনুমান নয়, কাগজ-কলমে হিসাব করা তথ্য। সে কারণেই জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখে, বিশ্বাস করে। অবশ্য আমাদেরও সীমাবদ্ধতা আছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে নানা সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। ভালো-মন্দের মধ্য দিয়েই আমাদের পথচলা, এবং সেখান থেকেই আমরা কিছু করে দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “জনগণের যে প্রশ্ন, যে প্রত্যাশা—তা অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট মহলের চাওয়া-পাওয়ার সঙ্গে মেলে না। কিন্তু আমরা এমন একটি রাজনৈতিক দল, যার ওপর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নির্ভর করে, বিশ্বাস করে। তাই আমাদের বার্তা স্পষ্ট—সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবি ও আকাঙ্ক্ষাকে একত্রে নিয়ে আমরা সংস্কার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের লক্ষ্য, সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
গণতন্ত্রের উত্তরণ এবং মানুষের ভোট ও রাজনৈতিক অধিকার যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়—এমন আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “যদি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং রাজনৈতিক অধিকার বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে সবকিছু ধ্বংসের মুখে পড়বে। গত ১৫ বছরে এই অধিকার, বিশেষ করে ভোটাধিকার, জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশের বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সমাজে ব্যাপক অনাচার ও নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিএনপির ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। আমরা শুধু এই দফাগুলো মেনে চলব না, সুযোগ পেলে ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়নও করব। আমরা যে সংগ্রামে রাজপথে নেমেছিলাম, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সেই আন্দোলনে বহু নেতাকর্মী গুম-খুন ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কেউ পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন—তাঁদের এই ত্যাগকে আমরা কখনোই বৃথা যেতে দিতে পারি না।”