ধ্যপ্রাচ্যের গাজা উপত্যকায় মানবিক সংকট দিন দিন তীব্র আকার নিচ্ছে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে যে গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি খাদ্য সরবরাহ গুদামে ব্যাপক সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজার ক্ষুধার্ত মানুষজন খাদ্যের জন্য লড়াই করতে গিয়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে।
খাদ্য গুদামে সংঘর্ষের ঘটনাসংবাদ
এএফপি সংবাদ সংস্থার ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, দেইর আল-বালাহে অবস্থিত ‘আল-গাফারি’ খাদ্য গুদামে হাজার হাজার মানুষ ঢুকে খাদ্য সামগ্রী লুট করছে। গুদামে রাখা ময়দার বস্তা ও অন্যান্য খাদ্য কার্টন দ্রুত তোলা হচ্ছিলো, ঠিক সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। তবে গুলির উৎস কোথা থেকে তা স্পষ্ট হয়নি। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ঘটনায় কিছু খাদ্য সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা গাজার ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য ছিল।
গাজার খাদ্য সংকটের পেছনের কারণ
গাজার সংকটের মূল কারণ ইসরায়েলি অবরোধ। প্রায় তিন মাসের কঠোর অবরোধের পর সম্প্রতি কিছুটা শিথিল করা হলেও গাজার মানুষের মানবিক চাহিদা এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে। WFP জানিয়েছে, অবরোধের ফলে গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য মৌলিক সামগ্রী সরবরাহে বিশাল সমস্যা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে তারা ১২১টি ট্রাক গাজার মধ্যে পাঠিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে খাদ্য ও মানবিক সহায়তা। তবে এটি গাজার মানুষের প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট নয়। জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য দূত সিগ্রিড কাগ বলছেন, গাজার মানুষের জন্য এই সাহায্য একটি ‘লাইফবোটের মতো’ যা তাদের বাঁচানোর জন্য জরুরি।
মানবিক সহায়তার সংকট ও বিতরণে সমস্যা
গাজার মানুষের জন্য খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা আগে থেকেই গুদামে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি লুটপাটের কারণে এই সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিঘ্ন দেখা দিয়েছে। গাজার বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস জানিয়েছে, সম্প্রতি রাফাহ শহরে এক বিতরণ কেন্দ্রে সংঘর্ষের সময় প্রায় ৪৭ জন আহত হয়েছে।
একই সঙ্গে গাজার একটি বেসরকারি সংস্থা গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF) রয়েছে, যারা ত্রাণ বিতরণে যুক্ত রয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এই গোষ্ঠীকে সন্দেহ করছে এবং অভিযোগ করছে যে হামাস সশস্ত্র গোষ্ঠী তাদের মাধ্যমে ত্রাণ চুরি করছে। GHF এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গাজার মানুষের জীবনযাত্রা ও ক্ষুধার্তদের দুরবস্থা
গাজার প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সংকটে ভুগছে। এই সংকটের কারণে বহু মানুষ ক্ষুধার্ত ও দুর্বল হয়ে পড়ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান জোনাথন হুইটল বলেছেন, “গাজার খাদ্য সহায়তা দ্রুত বৃদ্ধি করা দরকার, যাতে ক্ষুধার্ত মানুষরা নিরাপদে খাদ্য পায় এবং লুটপাট কমানো যায়।”
ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। অনেকেই দীর্ঘ সময় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, আবার কেউ কেউ সহিংস পন্থায় খাদ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে। এ কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বারবার ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষকে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে। যুদ্ধবিরতি ও অবাধ সরবরাহ ছাড়া গাজার সংকট সমাধান সম্ভব নয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা গাজার জন্য ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে, কিন্তু অবরোধ এবং নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সাহায্য পৌঁছে দিতে বিলম্ব হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার সংকট দূর করতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ জরুরি।
সাম্প্রতিক নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতি
গাজা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু। ২০২৩ সাল থেকে চলমান সংঘর্ষ ও অবরোধের কারণে গাজার মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাপনে দারুণ বিপর্যস্ত। খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ অপ্রতুল, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি বড় চিত্র তুলে ধরে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির গুদামে লুটপাটের ঘটনা এই সংকটের গভীরতা প্রকাশ করে। ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে, যা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক আইন উভয়ের বিরুদ্ধ।