রোজা রেখে পর্যাপ্ত না ঘুমালে শরিলের কি হয়।

রোজা রেখে পর্যাপ্ত না ঘুমালে কী হয়
ভালো ঘুমের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম সময় ব্যয় করুন ছবি: পেক্সেলস

ঘুম কেন জরুরি?

ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের মেটাবলিজম সিস্টেম এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, জীবনে স্থিতি আনে এবং ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে। নিয়মিত ঘুম হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায় এবং লং ও শর্ট টার্ম মেমোরি গুছিয়ে রাখে। ঘুম আমাদের স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ করে এবং শারীরিক, মানসিক ও মস্তিষ্কের কার্যক্রম ঠিক রাখে।

জীবনের মোট সময়ের এক-তৃতীয়াংশ ঘুমের জন্য বরাদ্দ করা উচিত, কারণ ঘুম ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত, আট ঘণ্টা ঘুম মস্তিষ্কের কার্যক্রম সঠিকভাবে বজায় রাখতে সহায়তা করে। যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি, তখন এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম শুরু হয়, যা আমাদের জীবনের জন্য অপরিহার্য। শরীর ও মনের সঠিক কার্যক্রম এবং “কোয়ালিটি লাইফ” নিশ্চিত করার জন্য প্রতিদিন আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।

কে কতক্ষণ ঘুমাবে?

সাধারণভাবে বলা হয়, একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য ৮ ঘণ্টা ঘুম আদর্শ। তবে, বয়সভেদে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন এর পরামর্শ অনুযায়ী:

  • ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের রাতে অন্তত ৯-১১ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। তবে, যদি তারা নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমায়, তবুও তারা নিজেকে ঠিকমতো চালিয়ে নিতে পারে।
  • ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের ৮-১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। তবে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়মিত ৭ ঘণ্টা ঘুম নিয়েও ঠিকঠাক থাকতে পারে।
  • চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা অনেক সময় ৬ ঘণ্টা ঘুমিয়েও দিব্যি চলতে পারেন। তবে, ঘুমের পরিমাণ এরকম কম হলে তা উদ্বেগজনক হতে পারে এবং শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ঘুমের প্রয়োজনীয়তা বয়সের পাশাপাশি শরীরের চাহিদা এবং জীবনযাত্রার ওপরও নির্ভর করে।

রোজা রেখে পর্যাপ্ত না ঘুমালে কী হয়?

রমজানে তারাবিহর নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত পালনের জন্য বিশেষ সময় বরাদ্দ থাকে, আর শেষ রাতে উঠতে হয়। এর ফলে ঘুমের সময় কমে যায়। ঘুম ঠিক রাখতে কিছু আনুষঙ্গিক কাজ কমিয়ে আনতে হবে, যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কম সময় ব্যয় করা এবং সম্ভব হলে দিনেও খানিকটা ঘুমানো। এতে ক্লান্তির অনুভূতি কমে আসবে এবং শরীর কিছুটা পুনরুদ্ধার পাবে।

ঘুমের অভাব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, হার্টের অসুখ, অনিয়মিত হার্টবিট, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিসের মতো শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া, ঘুম কম হলে কার্টিসল নামক একটি হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ত্বকের কোলাজেন ভেঙে ফেলতে পারে, ফলে ত্বক শুষ্ক ও বার্ধক্যগ্রস্ত হতে পারে।

যাঁরা দিনে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমান, তাঁদের মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। ঘুমের অভাবের সঙ্গে অবসাদগ্রস্ততা ও মানসিক চাপের সম্পর্ক গভীর। দীর্ঘদিন কম ঘুমানোর ফলে স্মৃতিহীনতা, স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারানো, ভুলে যাওয়া রোগ, ইনসোমনিয়া এবং হ্যালুসিনেশনসহ নানা ধরনের মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা হতে পারে।

অতএব, রমজানে শরীর ও মন সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *