গত ২৬ মে ২০২৫ তারিখ বিকেলে রাজধানীর রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বাইরে বের হওয়ার পর এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নিখোঁজ হন। পরিবার খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পায়নি। দুই দিন পর, ২৮ মে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে অজ্ঞাত একটি নম্বর থেকে ভিকটিমের মায়ের ফোনে কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে হলে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিতে হবে।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে ভিকটিমের পরিবার দ্রুত উত্তরা পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
সংবাদ পেয়ে পুলিশের একটি বিশেষ দল প্রযুক্তির সহায়তায় অপরাধীদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তদন্তে দেখা যায়, অপহরণকারীরা উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় অবস্থান করছে।
অভিযানে উদ্ধার ভিকটিম ও গ্রেপ্তার পাঁচজন
পুলিশ ২৮ মে দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে উক্ত বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানে অপহৃত ছাত্রীকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয় এবং পাঁচজন অপহরণকারীকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—
- মোঃ মাসুম পারভেজ (৩৮)
- মোঃ সোলাইমান হোসেন (৩৮)
- শফিকুল ইসলাম সৌরভ (২৭)
- মোছাঃ মায়া (২৫)
- মোছাঃ রুলি খানম (১৯)
এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়:
- বিভিন্ন সময় আদায় করা মুক্তিপণের মোট ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা
- ৬০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট
- দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা
- তিনটি মোবাইল ফোন
অভিযানের সময় আরও কয়েকজন চক্রের সদস্য পালিয়ে যায়। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
কীভাবে কাজ করত এই অপহরণ চক্র?
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি পেশাদার অপহরণকারী চক্রের সদস্য। তারা কিশোরী ও তরুণীদেরকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে অপহরণ করত। এরপর ভিকটিমকে আটকে রেখে অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ধারণ করত। এই ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের পরিবার থেকে মুক্তিপণ আদায় করত।
মামলা ও পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া
উত্তরা পশ্চিম থানায় আসামিদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে—
- নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন
- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন
- পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন
গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং পলাতকদের ধরতে তৎপরতা চালানো হচ্ছে।