উপদেষ্টা পদত্যাগে আহ্বান জানিয়ে ফের রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ালেন ইশরাক হোসেন

রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের উত্তেজনার সঞ্চার করেছেন ঢাকার সাবেক মেয়রপ্রার্থী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইশরাক হোসেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চেয়ে তিনি ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্টে তাদের উদ্দেশে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন।

ইশরাক লিখেছেন, “গণতান্ত্রিক ভাষায়, রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে যৌক্তিক কারণে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি।”

তার যুক্তি— যেহেতু তারা সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত এবং আগামিতে নির্বাচন করারও সম্ভাবনা রয়েছে, তাই তাদের এই পদে থাকা সরকারের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্ন তোলে। রাজনৈতিকভাবে সংশ্লিষ্ট কেউ সরকারে দায়িত্বে থাকলে সেটি কোনোভাবেই স্বচ্ছ বা নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির অনুকূলে যায় না।

তিনি আরও বলেন, “আপনারা পদত্যাগ করলে বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতার ইমেজই বৃদ্ধি পাবে। এখনও মনে করি সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দলীয় ও সাংগঠনিক কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারলে দেশ ও জনগণকে আপনারা আরও ভালো কিছু দিতে পারবেন।”

ইশরাক তার পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী নাহিদ ইসলামের দৃষ্টান্ত টেনে আনেন। তিনি উল্লেখ করেন, নাহিদ ইসলাম চাইলে হয়তো আরও কিছুদিন মন্ত্রিত্ব করে তারপর রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারতেন, কিন্তু তিনি সেই সুযোগ না নিয়ে নীতিনিষ্ঠ সিদ্ধান্তে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। এমনকি তিনি অতীতে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেলেও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শুধুমাত্র রাজনৈতিক আদর্শে অবিচল থাকতে।

ইশরাক হোসেন বলেন, “ক্ষমতা ধরে রাখলে আপনাদের দলের লোকজনকে বিশেষ সুবিধা দিতেই হবে, এটা থেকে বিরত থাকার বা শতভাগ নিরপেক্ষ থাকার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা অথবা ক্ষমতা আপনাদের নাই। কারোরই থাকেনা।”

তিনি আরও লিখেছেন, “কাঁঠাল ভাঙবে আপনাদের মাথায়, খাবে কিন্তু অন্য সবাই।” ক্ষমতার লোভে কোনো পদ আঁকড়ে থাকার বদলে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার মধ্যেই রাজনৈতিক শ্রদ্ধা ও সঠিকতা নিহিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তার পোস্টে তিনি অতীতের নিজের অবস্থান ও সমালোচনার কথাও তুলে ধরেন। লিখেছেন, “এখন নিশ্চয়ই বলবেন বা ভাববেন ক্ষমতার লোভে অবৈধ মেয়র হওয়ার জন্যে দিনের পর দিন আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে জনভোগান্তি তৈরি করে নিজেকে সাধু বানিয়ে আমাদের নীতিবাক্য শোনাচ্ছেন তাই না? আমি নিজেও কি কম সমালোচনার শিকার হয়েছি এটি করতে গিয়ে? কিন্তু আমার আর কোনও উপায় ছিলো না।”

তিনি বলেন, “বন্দোবস্ত তো আগেরটাই অনুসরণ হচ্ছে। আরও পাকাপোক্ত করা হচ্ছে বললেও ভুল হবে না। আপনাদের পদত্যাগের দাবী থেকে সরার কোনো সুযোগ নাই।”

এই পোস্টের মাধ্যমে তিনি যেন একদিকে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের উদাহরণ তুলে ধরেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার এই বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের আস্থার জায়গায় নতুন করে আলোচনার জন্ম দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *