টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানোকে অবিশ্বাস্য বললেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানোকে অবিশ্বাস্য বললেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানোর ঘটনাকে “অবিশ্বাস্য” বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তাঁর মতে, ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পরপরই বামপন্থীদের দায়িত্ব ছিল যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করা, কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেলেও সেই কাজ হয়নি। এর সুযোগে বিভিন্ন বুর্জোয়া গোষ্ঠী—ধর্মনিরপেক্ষ, সেক্যুলার, নন–সেক্যুলার ও ধর্ম–ব্যবসায়ী—শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবীর মিলনায়তনে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।

“এটা বিপ্লব নয়, কেবল সরকারের পতন”

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, চব্বিশের অভ্যুত্থানকে অনেকেই বিপ্লব বলে আখ্যা দিচ্ছেন, কিন্তু এটি কেবল সরকারের পতনমাত্র। আসল বিপ্লব হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব, যার মাধ্যমে সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের মুক্তি আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ধনীদের উপনিবেশে পরিণত হয়েছে; এখানে চলছে সম্পদ লুণ্ঠন ও পাচারের সংস্কৃতি।

তিনি আরও বলেন, “সরকার পতনের পর মনে হয়েছিল ফ্যাসিবাদ শেষ, কিন্তু পুঁজিবাদী ফ্যাসিবাদ এখন আরও চরম রূপ নিয়েছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী পুঁজিবাদী শক্তির প্রভাব বেড়ে গেছে, যার সুযোগ নিচ্ছে দক্ষিণপন্থীরা।”

বাম ঐক্যের জরুরি প্রয়োজন

এই প্রবীণ শিক্ষাবিদ মনে করেন, সামাজিক বিপ্লবের জন্য সমাজতন্ত্র ও সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাসী সকল বামপন্থী দলকে যুক্ত ফ্রন্ট গঠন করতে হবে। “এই যুক্ত ফ্রন্ট ৫৪–এর হযবরল যুক্ত ফ্রন্টের মতো হবে না, বরং শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হতে হবে। মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলেও সামাজিক বিপ্লবে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে,” তিনি বলেন।

টিএসসিতে আলবদর–রাজাকারদের ছবি টানানোর প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই চেষ্টা আরও বাড়বে, যদি বামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ না হয়।”

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “গণ–অভ্যুত্থানে ছাত্র–শ্রমিক–জনতা বিজয় এনেছে, কিন্তু বর্তমান সরকার বুর্জোয়া ব্যবস্থা টিকিয়ে রেখে সমাধান খুঁজছে। মুক্তির পথ হচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোটকে বিকল্প শক্তি হিসেবে গড়ে তুলে আরেকটি অভ্যুত্থান ঘটানো।”

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ অভিযোগ করে বলেন, “সরকার সংস্কারের নামে চুনকাম করছে। ’৭১–এর মুক্তিযুদ্ধকে ’২৪–এর আন্দোলন দিয়ে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে—যা জাতি মেনে নেবে না।”

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) প্রধান সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, “যেই ক্ষমতায় আসছে, সেই ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠছে। তাই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে এবং বাম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”

সভায় সভাপতিত্ব করেন ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্য নেতাদের মধ্যে হারুন অর রশিদ ভূঁইয়া, মোশরেফা মিশু, আবদুল আলী, সুনয়ন চাকমা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *