
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যার প্রভাব পড়বে কোম্পানির মুনাফায় এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে—এমন সতর্কবার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানির নির্বাহীরা। পাশাপাশি, তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এই পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে এবং মন্দা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইন্টেল, জনপ্রিয় জুতা ব্র্যান্ড স্কেচার্স, এবং ভোগ্যপণ্য প্রস্তুতকারী প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বল (পি&জি) ইতোমধ্যে অনিশ্চয়তাজনিত কারণে তাদের মুনাফা পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে। এর প্রভাবে কিছু কোম্পানির শেয়ারমূল্যও হ্রাস পেয়েছে।
শুল্ক আরোপ ও তার স্থগিতাদেশ
বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চলতি মাসের শুরুতে ৫৭টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন হারে পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। যদিও ৯ এপ্রিল এ সিদ্ধান্ত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়, তারপরও ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রাখা হয়েছে।
নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কর্পোরেট মহলে
ইন্টেলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (CFO) ডেভিড জিনসনার জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাণিজ্যনীতি ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা অর্থনৈতিক স্থবিরতা সৃষ্টি করেছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি খরচ বৃদ্ধি ও রাজস্ব হ্রাসের আশঙ্কা করছে। ইতিমধ্যে ইন্টেলের শেয়ারের দাম ৫ শতাংশের বেশি কমেছে।
একইভাবে, স্কেচার্স কোম্পানির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ডেভিড ওয়েনবার্গ বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতি এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে, এমন বাস্তবতায় ব্যবসার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করাও কঠিন।’ এশিয়ায় উৎপাদননির্ভর হওয়ায় (বিশেষ করে চীনে), শুল্কের প্রভাব স্কেচার্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলছে।
ভোগ্যপণ্যেও চাপ
পি&জি জানিয়েছে, চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত কাঁচামালের খরচ বেড়ে যাওয়ায় তারা কিছু পণ্যের দাম সমন্বয় করতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রধান আন্দ্রে শুল্টেন বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করব শুল্কের প্রভাব কমাতে, তবে কিছু পণ্যের দাম বাড়াতে হতে পারে।’
আলোচনা ও সম্ভাবনা
এদিকে, ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর থেকে ৭০টির বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতোমধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে মার্কিন বাণিজ্য কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছে, যা উভয় পক্ষের ভাষায় ‘খুবই ইতিবাচক’ ছিল।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই প্রযুক্তিগত শর্তাবলি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পমন্ত্রী আহন ডুক-গিউন বলেছেন, তাঁরা ‘জুলাই প্যাকেজ’ ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
৯০ দিনের শুল্ক স্থগিতাদেশ শেষ হবে ৪ জুলাই। এর আগেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমঝোতা না হলে নতুন করে শুল্ক আরোপের ঝুঁকি থেকেই যাবে।