চীনের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ ট্রাম্পের, পুনরায় উত্তপ্ত বাণিজ্য সম্পর্ক

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছেন যে চীন একটি সাময়িক বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করেছে, যার ফলে বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তির মধ্যে উত্তেজনা আবারও বাড়তে পারে।

এই মাসের শুরুতে সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে অনুষ্ঠিত আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন একে অপরের ওপর আরোপিত কিছু শুল্ক হ্রাস করতে সম্মত হয়েছিল। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীন তার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি মানেনি।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে উল্লেখ করেন যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির ফলে চীন “গুরুতর আর্থিক সংকটে” পড়েছে, যা তাদের দ্রুত একটি চুক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তবে তিনি দাবি করেন, বেইজিং তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে, যদিও তিনি সুনির্দিষ্ট করে বলেননি কীভাবে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার পরে জানান, চীন অ-শুল্ক বাধাগুলি সরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছিল, কিন্তু এখনো সে পথে পূর্ণ অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। চীনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য আসেনি।

গ্রিয়ার আরও বলেন, চীন কিছু মার্কিন কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে এবং বিরল খনিজ পদার্থের রপ্তানি সীমিত করেছে—যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তার কথায়, “চীন শুল্ক হ্রাসে কিছুটা এগিয়েছে বটে, কিন্তু তাদের পাল্টা পদক্ষেপে অনেক দেরি হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন চীনের অগ্রগতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীন সম্পর্কিত এক মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে বাণিজ্য আলোচনা “আপাতত স্থগিত রয়েছে”।

বেসেন্ট জানান, আলোচনার জটিলতা বিবেচনায় এনে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের আরও চিন্তাভাবনা দরকার। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ভবিষ্যতে ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে পুনরায় যোগাযোগ হতে পারে।

সম্প্রতি এক আদালতের রায়ে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যদিও হোয়াইট হাউস সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছে এবং শুল্ক নীতি আপাতত চালু রয়েছে।

এদিকে, তার প্রশাসন চীনা শিক্ষার্থীদের ভিসা প্রত্যাহারে “আক্রমণাত্মক” পদক্ষেপ নিয়েছে, যার আওতায় প্রায় ২৮০,০০০ শিক্ষার্থী প্রভাবিত হতে পারেন।

চলতি মাসের চুক্তি অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। একইভাবে, চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়েছে।

ট্রাম্পের মতে, শুল্ক আরোপ মার্কিন জনগণকে দেশীয় পণ্য কিনতে উৎসাহিত করবে, ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়বে।

বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাসের জন্য তার প্রশাসন শুল্ককে কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

একই সময়ে, জাপানের একটি প্রতিনিধিদলও মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছে।

বেসেন্ট জানান, কিছু বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে, তবে কিছু জটিলতার জন্য বিলম্ব হচ্ছে।

শুল্ক নীতির বৈধতা নিয়ে চলমান আদালতীয় বিতর্ক এবং ট্রাম্পের ক্ষমতা অতিক্রম সংক্রান্ত প্রশ্নে নানান বিশ্লেষক মনে করছেন, এতে চুক্তি নিয়ে অন্য দেশগুলোর আগ্রহ হ্রাস পেতে পারে।

তবে আপাতত একটি আপিল আদালত হোয়াইট হাউসের অনুরোধে পূর্বের আদেশ স্থগিত রেখেছে। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন যে সুপ্রিম কোর্ট এ সিদ্ধান্ত বাতিল করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *