
নোয়াখালীর হাতিয়ায় রিকশাচালক একরাম হোসেনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তালা মেরে দিয়েছেন সুদ কারবারি তোফায়েল আহম্মদ। এর ফলে গত আট দিন ধরে একরামের স্ত্রী, সন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়ি খোলা বারান্দায় ঝড়–বৃষ্টির মধ্যে জীবনযাপন করছেন।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) বিকেলে চরকিং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের চরবগুলা গ্রামে দেখা যায়, ঘরের দরজায় তালা ঝুলছে এবং পরিবারের সদস্যরা মশারির নিচে বসে কাঁপছেন। স্থানীয়রা জানান, একরাম তোফায়েল আহম্মদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে সুদের ভিত্তিতে টাকা নিয়েছিলেন। নিয়মিত সুদের টাকা দিতে না পারায় তোফায়েল তার ঘরে তালা মেরে দেন।
রিকশাচালক একরাম হোসেন বলেন, “২০১৫ সালে দুর্ঘটনায় আহত দুইজনের চিকিৎসার জন্য তোফায়েলের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে আরও টাকা নেয়ার ফলে ঋণ দাঁড়ায় প্রায় ৭১ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি, তবু সুদের ফাঁদে পড়ে জীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। আমাকে মারধর করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আমার অনুপস্থিতিতে ঘরের সব মালামাল বের করে তালা মেরে দেওয়া হয়েছে।”
একরামের স্ত্রী বলেন, “আট দিন ধরে বাচ্চাদের নিয়ে খোলা বারান্দায় থাকতে হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রান্নাবান্না বন্ধ, প্রতিবেশীদের সাহায্যে কোনোভাবে দিন পার করছি।”
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আব্দুল হালিম এই ঘটনার সমালোচনা করে বলেন, “টাকার জন্য কারো ঘরে তালা মারা চরম অমানবিক কাজ। শিশুরা ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভুগছে, ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই। ঘটনা হৃদয়বিদারক।”
অভিযুক্ত তোফায়েল আহম্মদ দাবি করেন, “একরাম আমার কাছ থেকে লাভের ওপর টাকা নিয়েছিল। টাকা না দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাই তালা দিয়েছি। টাকা পরিশোধ করলে তালা খুলে দেব।”
চরকিং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাঈম উদ্দিন বলেন, “সুদের পাওনার জন্য কারো বসতঘরে তালা মারা আইনত অপরাধ। আমি চৌকিদার পাঠিয়ে তালা খোলার ব্যবস্থা করেছি এবং দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করছি।”