
মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা সমন্বয় কমিটির চারজন উচ্চপদস্থ নেতা একযোগে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন। শনিবার বিকেলে শিবচর প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা তাদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী শাকিল খান, সমন্বয় কমিটির সদস্য মো. রিয়াজ রহমান, মহিউদ্দিন এবং কাজী রফিক।
পদত্যাগকারীরা বলেন, “আমরা শিবচর উপজেলার কর্মী হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। দেশের কল্যাণ এবং একটি নতুন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এ সংগঠনে যোগ দিয়েছিলাম। পরে এই কমিটি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে পরিচিতি লাভ করলে আমরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দলে অন্তর্ভুক্ত হই। আমরা কোনও রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসিনি, তবে কোটা আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ের গণআন্দোলনে ছাত্রসমাজের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছি। যদিও রাজনীতিতে আমাদের অভিজ্ঞতা সীমিত, তবু দেশপ্রেম ও সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।”
তবে তারা অভিযোগ করেন, দলের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা ও পারিবারিক চাপের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনীয়তায় পারিবারিক সম্পর্কেও টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। পদত্যাগকারীরা শিবচর থানায় দলের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব অযোগ্য ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক উল্লেখ করেন। তারা বলেন, “যারা আদর্শিক, নৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে অযোগ্য, তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে দলের প্রকৃত, নিষ্ঠাবান ও ত্যাগী কর্মীরা যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই ধরনের নেতৃত্বের মাধ্যমে শিবচরের ইতিবাচক পরিবর্তন বা টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
পদত্যাগকারীরা জানান, দীর্ঘ আত্মবিশ্লেষণ ও গভীর চিন্তাভাবনার পর তারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় দল থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বর্তমানে তারা দেশের কোনো রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন। অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটির জন্য তারা সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং শিবচরবাসীর কাছে আন্তরিক ক্ষমা চেয়েছেন। তারা বলেন, “আমাদের কর্মকাণ্ডে যদি কারও মনে আঘাত লেগে থাকে, তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত। তাই দয়া করে আমাদের ভুলের জন্য ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।”
এদিকে, পদত্যাগকারীরা শিবচর এলাকার রাজনৈতিক পরিবেশ ও দলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “শিবচরের উন্নয়ন ও স্বার্থে আমাদের প্রত্যাশা ছিল সুষ্ঠু নেতৃত্ব এবং ন্যায়বিচার। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, দলীয় নেতাদের মধ্যেও পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং বিভাজন বেড়েই চলছে। এতে করে এলাকার সাধারণ মানুষ তথা দলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা ছড়াচ্ছে।”
তারা আরও বলেন, “রাজনীতিতে সততা, নিষ্ঠা ও একাত্মতা ছাড়া কোনো দল এগোতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখি, অনেক সময় অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে দলের কর্মীরা অবহেলিত হচ্ছেন, যা দলের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমরা মনে করি, পরিবর্তন ছাড়া দলের টেকসই উন্নয়ন অসম্ভব।”
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তারা দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আসুন সবাই মিলে একটি সুদৃঢ় ও ন্যায়সঙ্গত দল গড়ার জন্য কাজ করি, যেখানে প্রতিটি কর্মী সম্মানিত এবং দলের মূল্যায়ন পাবেন।”
এই পদত্যাগের মাধ্যমে শিবচরের এনসিপি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আগামী দিনে এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাব কী হবে তা সময়ই বলবে।