রিজভী আহমেদ: নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্কিম পথে হাঁটছে

রিজভী আহমেদ: নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বঙ্কিম পথে হাঁটছে

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্রের সংস্কারের পরিবর্তে উল্টো তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। তার মতে, বাংলাদেশের বাতাস অত্যন্ত পরিশোধিত হলেও, মাঝে মাঝে এক ধরনের ‘বঙ্কিম বাতাস’ বইছে – যা অতীতে যেমন শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার শাসনে দেখা গেছে, এবার সেটির ছোঁয়া অন্তর্বর্তী সরকারের দিকেও যাচ্ছে কি না, তা এখন মানুষের কাছে একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রবিবার (৮ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী ভ্যান ও রিকশা শ্রমিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত খাবার বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রিজভী প্রশ্ন তোলেন, মাত্র দুই-একটি রাজনৈতিক দলের কথায় কেন প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিল মাসে নির্বাচনের পরিকল্পনার কথা বলেন? তার ভাষ্য, এপ্রিল হলো গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ ও ঝড়-বৃষ্টির সময়। একই সময়ে এসএসসি ও অন্যান্য পরীক্ষাও থাকে। তাছাড়া তখনই রোজার ঈদ শেষ হবে, যার অর্থ রমজান মাসে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হবে – যা বাস্তবসম্মত নয়। তাই তিনি এপ্রিল মাসে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবকে ‘অপরিণামদর্শী ও বালখিল্য সিদ্ধান্ত’ হিসেবে আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, দেশের ছাত্র-জনতার যে ত্যাগ ছিল, তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। অথচ বর্তমান শাসকগোষ্ঠী সেই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। গত ১৫-১৬ বছরে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। দিনের ভোট রাতে করে, আওয়ামী লীগ সমস্ত নির্বাচনী ন্যায়বিচারকে পদদলিত করেছে।

রিজভী আরও বলেন, গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। মানুষ ভিন্নমত পোষণ করতেই পারে, তবে যাকে জনগণ ভোট দেবে, তারাই বিজয়ী হবে – এটাই নির্বাচন। এই ন্যায্যতার জন্যই বহু মানুষ নিখোঁজ হয়েছেন – ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ হাজারও মানুষ নিখোঁজ বা গুম হয়েছেন। শুধুমাত্র মত প্রকাশের অধিকার চাওয়াটাই তাদের অপরাধ হিসেবে দেখা হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনার আমলে অনেক যুবককে গুম ও বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেউ নদীর পাড়ে, কেউ খালের ধারে লাশ হয়ে পাওয়া গেছে। কেউ কারাবন্দি, কেউ আয়না ঘরে বন্দি। সবকিছুর কেন্দ্রে ছিল গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা।

রিজভীর মতে, এখনো নির্বাচন নিয়ে একধরনের টানাপোড়েন চলছে। তিনি বলেন, “আমরা সব না বুঝলেও এটুকু বুঝি—নির্বাচন নিয়ে একটি সুপরিকল্পিত বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে।”

প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে গিয়ে দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সেখানে তিনি বলেছেন যে একটি দল ছাড়া কেউ নির্বাচন চায় না। অথচ এই দেশের মানুষ জানে – সেই একটি দল কতটা জনসমর্থন রাখে। বাস্তবতা হলো, অনেক রাজনৈতিক দলই ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন চেয়েছে, তাই ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে তিনি পুনরায় দাবি করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক জহির রায়হান। পরিচালনা করেন আফজাল হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুব ইসলাম, ডা. জাহিদুল কবির প্রমুখ। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন সংগঠনের নেতা আরিফুর রহমান তুষার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *