‘শান্তির দল’, ‘জনপ্রিয় পার্টি’র মতো বহু রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধনের আবেদন

‘শান্তির দল’, ‘জনপ্রিয় পার্টি’র মতো বহু রাজনৈতিক দলের ইসির নিবন্ধনের আবেদন
নির্বাচন ভবন – ফাইল ছবি

নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে ৬৫টি রাজনৈতিক দলের আবেদন, সময় বাড়িয়েছে ইসি

‘বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি’, ‘বাংলাদেশ শান্তির দল’, ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলন’, ‘জাতীয় ভূমিহীন পার্টি’, ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’, ‘বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি’, ‘জনতার কথা বলে’—এ ধরনের নানা নামের রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট ৬৫টি দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন জমা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও ৪৬টি দল নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে, যদিও বেশিরভাগ দলই এখনো মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম চালায় না বা নামসর্বস্ব।

নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময়সীমা গত ১০ মার্চ ঘোষণা করেছিল ইসি, যা ছিল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে গতকাল রোববার আবেদনের সময় আরও দুই মাস বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এখন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা যাবে আগামী ২২ জুন পর্যন্ত।

ইসি সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, সময় বাড়ানোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি মাস সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলগুলোর সংখ্যা ৫০টি। কোনো দলকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে হলে ইসিতে নিবন্ধিত হতে হয়, এবং এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকে। যদিও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন শর্ত কিছুটা সহজ করার সুপারিশ করেছিল, তবে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে ইসি আগের শর্তেই দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।

নতুন দল নিবন্ধনের আবেদন বাড়তে পারে, ৯৩টি দল আবেদন করলেও অধিকাংশই নামসর্বস্ব

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন আরও বাড়তে পারে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল নিবন্ধন চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছিল, তবে বেশিরভাগ দলই ছিল নামসর্বস্ব। প্রাথমিক কাগজপত্র বাছাইয়ের পর ৮১টি দলের আবেদন বাতিল হয়ে যায়।

প্রাথমিক বাছাই শেষে, ইসি গণ অধিকার পরিষদ, এবি পার্টি সহ ১২টি দলের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল মাত্র দুটি দলকে—বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)।

তবে, ওই দুটি দলও রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘ভুঁইফোড়’ দল হিসেবে পরিচিত ছিল, এবং ইসির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, ইসি যে দলের নিবন্ধন দিয়েছিল, সেগুলি সাধারণত মাঠপর্যায়ে কোনো কার্যক্রম চালায় না এবং তাদের রাজনৈতিক শক্তি ছিল খুবই সীমিত।

এখনো নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এসব দিক মূল্যায়ন করার জন্য ইসি কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।

নতুন নিবন্ধনের জন্য ৬৫টি দল আবেদন করেছে, তালিকায় রয়েছে বেশ কিছু বাহারি নাম

নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধন পেতে এবং নিবন্ধনের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করা রাজনৈতিক দলগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে ইসি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দল হলো: বাংলাদেশ সংরক্ষণশীল দল (বিসিপি), জনতা কংগ্রেস দল, বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টি, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি (বাজাপা), বাংলাদেশ তৃণমূল জনতা পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তি ঐক্যদল, বাংলাদেশ জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ নাগরিক আন্দোলন পার্টি, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা জনতা পার্টি, জাস্টিস পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জেনারেল পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-শাহজাহান সিরাজ), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি (কেএসপি), ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলন, বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), ফরোয়ার্ড পার্টি, বাংলাদেশ সনাতন পার্টি, স্বাধীন জনতা পার্টি, আমজনতার দল, সংবিধানবিষয়ক জনস্বার্থ পার্টি সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা যুব কমান্ড, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), বাংলাদেশ গণঅভিযাত্রা দল, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি, ন্যাশনাল লেবার পার্টি, জনতা মহাজোট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জনতার ঐক্য, জাতীয় জনতা পার্টি, সাধারণ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ জনতা ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশ জনগণের পার্টি, অহিংস গণ–আন্দোলন

তবে, নির্বাচন কমিশনে ‘আওয়ামী লিগ’ নামে নিবন্ধনের আবেদন করা উজ্জ্বল রায় নামের একজন ব্যক্তি আবেদন করেছিলেন, তবে সেটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

নিবন্ধনের শর্তাবলী
ইসির নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে এবং কার্যক্রমে সুনির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণের নিয়ম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • দলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে।
  • অন্তত এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় থাকতে হবে এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানায় কার্যালয় থাকতে হবে।
  • প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।

এছাড়া, দলের গঠনতন্ত্রে কিছু বিশেষ বিধানও থাকতে হয়। যেমন:

  • কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা।
  • নারীদের জন্য কমিটিতে অন্তত ৩৩% সদস্যপদ নির্ধারণ, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন।
  • শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শ্রমিক বা অন্যান্য পেশার সদস্যদের নিয়ে কোনো অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা।

এসব শর্ত পূরণ করে একাধিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তবে শেষ পর্যন্ত সেগুলোর যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।

নতুন দলের নিবন্ধন প্রক্রিয়া: ইসি কীভাবে যাচাই-বাছাই করে আবেদনগুলো

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সাধারণত নির্বাচন কমিশন (ইসি) নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা আবেদন করে, তাদের প্রথমে কাগজপত্র ও আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। আইন এবং বিধিমালা মেনে আবেদন না করলে সেগুলো বাতিল করে দেওয়া হয়।

যেসব দল প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হয়, তাদের মাঠপর্যায়ের তথ্য যাচাই করার জন্য ইসির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেন। মাঠপর্যায়ের যাচাইয়ে দলের কার্যক্রম, তাদের কার্যালয়ের উপস্থিতি এবং নিবন্ধন শর্ত পূরণ করা হয়েছে কি না—এসব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা একটি প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশনে উপস্থাপন করেন, যা পরবর্তী সময়ে কমিশনের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। নিবন্ধন অনুমোদিত হলে দলটি অফিসিয়ালি নিবন্ধিত হিসেবে গণ্য হয়।

সংশোধনী:
ইসি সূত্র জানায়, দলের আবেদন পাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে ‘বাংলাদেশ সংসারবন্দি পার্টি’ নামে একটি দলের নাম ছিল। তবে, টাইপিংয়ের ভুলে এই নামটি তালিকায় ভুলভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে, দলটির নাম ছিল ‘বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি’। সংশোধিত প্রতিবেদনে নামটি সঠিক করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *