
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার হিজলতলী এলাকায় দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের সময় তুরাগ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় তন্ময় ও অঙ্কিতা নামে দুই শিশু নিখোঁজ হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রতিমা বিসর্জনের জন্য স্থানীয় কয়েকজন একটি নৌকায় চেপে নদীর ঘাটের দিকে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যার ঠিক আগে, হঠাৎ আরেকটি নৌকার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে একটি নৌকা উল্টে যায়। মুহূর্তেই চারপাশে চিৎকার-আহাজারি শুরু হয়, নদীর জলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
নৌকায় থাকা বেশিরভাগ যাত্রী প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেন। কেউ সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হন, আবার কেউ দ্রুত পাশের আরেকটি নৌকায় উঠে প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু তন্ময় ও অঙ্কিতা নামের দুই শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়। তাদের বাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার দক্ষিণ হিজলতলী গ্রামে।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই নিখোঁজ শিশুদের স্বজনরা নদীর তীরে ছুটে আসেন। তাদের কান্নায় আশপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নিখোঁজ শিশুদের মায়ের আহাজারিতে উপস্থিত সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার আহমেদ জানান, “নৌকাডুবির ঘটনায় কয়েকজন যাত্রী পানিতে পড়েছিলেন। কেউ সাঁতরে উঠেছেন, কেউ পাশের নৌকায় উঠে বেঁচে গেছেন। তবে এখন পর্যন্ত দুই শিশু নিখোঁজ রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা মিলে তুরাগ নদীতে নিখোঁজ দুই শিশুকে উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।”
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। বিসর্জনের মুহূর্তটি সাধারণত আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু হিজলতলীর এই দুর্ঘটনা সেই আনন্দকে বিষাদে পরিণত করেছে। স্থানীয়দের মতে, দুর্ঘটনার পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এই দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নদীপথে নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথাযথতা নিয়ে। স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির মধ্যে সমন্বয়হীনতা, পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটের অভাব এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নৌকা ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো সামনে এসেছে।