জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে চলা অসন্তোষ চরমে উঠেছে। ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে ‘অবাঞ্ছিত’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের জন্য তিন দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হলেও সেই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে এই ঘোষণা দিয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করে দেওয়ার সরকারি অধ্যাদেশকে ঘিরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিরোধিতা করে আসছেন। তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। সর্বশেষ ২৬ মে থেকে তিন দিনের মধ্যে তাকে সরানোর দাবি জানানো হয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, “আমাদের ন্যায্য দাবিগুলোর সামনে বারবার বাধা সৃষ্টি করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো দুর্বল করে দিচ্ছেন, যা জাতীয় রাজস্ব ব্যবস্থার ভবিষ্যতের জন্য হুমকি। এজন্য আমরা আশাবাদী, সরকার দ্রুত তার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।”
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উল্লেখ করে ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “চেয়ারম্যান প্রথম থেকেই অধ্যাদেশ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখেননি, বরং সবকিছু গোপনে ও একক সিদ্ধান্তে চালিয়ে গেছেন। এতে এনবিআরের কর্মকর্তাদের মতামত ও প্রত্যাশা গুরুত্ব পায়নি।”
এছাড়া পূর্ববর্তী পদে থাকাকালীন সময়ে তিনি ব্যাংক খাতের অস্থিরতা, কর ফাঁকির সুবিধা প্রদান এবং অডিট কার্যক্রম বন্ধ করার মতো গুরুতর অভিযোগের সম্মুখীন ছিলেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বাড়িয়ে অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করার দায়ও তার ওপর আরোপ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে রাতে সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ নামে একটি অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআরকে ভাগ করে দেয়। এর প্রতিবাদে এনবিআরের কর্মকর্তারা পরদিন থেকেই অবস্থান ধর্মঘট ও কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করে যে, এনবিআর বিলুপ্ত হচ্ছে না। বরং একে স্বাধীন ও বিশেষায়িত বিভাগ হিসেবে গঠন করা হবে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে সংশোধনী আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা এনবিআরের কর্মকর্তা ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করার কথাও জানায়।
এ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা আপাতত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। তবে চেয়ারম্যান অপসারণের বিষয়ে তারা সময় বেঁধে দেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত চাপ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।