
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে মিটফোর্ড এলাকায় ঘটে যাওয়া লালচাঁদ সোহাগ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক অপপ্রচারের অংশ বলে দাবি করেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ও তার শীর্ষ নেতৃত্বের চরিত্রহরণ এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নিহতের পরিবারের বক্তব্য অনুসারে মামলার এজাহারে উল্লেখিত তিনজন আসামির নামের স্থলে অনেকে অভিযোগহীন ব্যক্তিদের নাম সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত সন্দেহভাজন আসামিদের এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। দলের শৃঙ্খলা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের মতো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ড, যেমন কুমিল্লায় মুরাদনগরে তিনটি হত্যা, মসজিদের ইমামের ওপর হামলা, খুলনায় যুবদল নেতার হত্যাসহ অন্যান্য ঘটনায় সবাই কি সমান প্রতিবাদ জানিয়েছে? এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ফখরুল বলেন, এসব ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে না কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি অভিযোগ করেন, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রকাশ্য দিবালোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এত কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও প্রতিরোধ হয়নি, যা জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। সেই সঙ্গে বলেন, মাত্র কয়েকজন সন্ত্রাসী এ ধরনের নৃশংস ঘটনা সংঘটিত করেছে যা গত বছর সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সম্পূর্ণ বিপরীতে। দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই হত্যাকাণ্ডকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা রয়েছে।
বিএনপি নেতারা সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানান, হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের ব্যবস্থা নিতে হবে। দলের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দলের অভ্যন্তরে একটি ‘তদন্ত ও তথ্যানুসন্ধানী কমিটি’ গঠন করা হয়েছে, যারা হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে জনসমক্ষে প্রকাশ করবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে যে কোনো ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের অপরাধীর কোনো দলীয় সম্পর্ক নেই এবং ব্যক্তিগত অপরাধ দলের উপর চাপিয়ে দেওয়া অনুচিত। তিনি সরকারের প্রতিও কঠোর আক্রমণ করেন যে, তারা রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে ফ্যাসিবাদের যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থানের মাধ্যমে দেশকে সুস্থ রাজনৈতিক পথে ফেরানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
শেষে ফখরুল বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা দৃঢ়ভাবে একত্রিত আছি এবং যারা এই দেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়, তাদের কোনো সুযোগ আমরা দেবো না।”