টোকিও, ২৯ মে ২০২৫ — মোহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (মিডাই) প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জিকা) সহায়তা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি টোকিওতে আয়োজিত ৩০তম নিক্কি ফোরাম: ফিউচার অফ এশিয়ার এক সাইডলাইনের বৈঠকে জিকার প্রেসিডেন্ট ড. তানাকা আকিহিকোর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, “মিডাই অঞ্চল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক। আমরা এই অঞ্চলকে বন্দর, সরবরাহ, মাছ ধরা, জ্বালানি এবং শহর গঠনের কেন্দ্রে পরিণত করতে চাই।”
অধ্যাপক ইউনূস জানান, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্র বন্দর গঠনের প্রস্তাব প্রথম দেয়া হয়েছিল জিকার সহায়তায় এবং এখন পুরো অঞ্চলটির জন্য একটি বিস্তৃত মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হচ্ছে। এতে উন্নত রাস্তাঘাট, রেললাইন, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি আধুনিক শহর নির্মাণ করতে চাই, যা শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সাথেও সংযুক্ত থাকবে।”
বৈঠকে ড. তানাকা জিকার পক্ষ থেকে মিডাই প্রকল্পে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
উত্তরে অধ্যাপক ইউনূস জানান, এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় বাড়াতে একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি মিডাই এলাকায় একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল স্থাপনের পরিকল্পনার কথাও জানান, যেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করতে পারবেন।
এছাড়া, গভীর সমুদ্র মাছ ধরা কার্যক্রম প্রসারিত করতে সরকারের আগ্রহের কথাও জানান তিনি। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমাদের মাছ ধরার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে দেশীয় জাহাজগুলো গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরতে পারে এবং প্রক্রিয়াজাত করে দেশীয় ও রপ্তানি বাজারে পৌঁছাতে পারে।”
ড. তানাকা বলেন, এটি প্রথমবারের মতো তিনি কোনো বাংলাদেশি নেতার কাছ থেকে গভীর সমুদ্র মাছ ধরার পরিকল্পনার কথা শুনলেন।
দুই নেতা জুলাইয়ের আন্দোলন, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমুখী উদ্যোগ ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। ইউনূস জানান, আগামী সাধারণ নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করলে তিনি আগের কাজের জগতে ফিরে যাবেন।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয় এবং এই মানবিক সমস্যার সমাধানে জিকার সহায়তা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। জিকার প্রেসিডেন্ট এই সংকটে আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।