
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ভেঙে দুটি নতুন অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গতি আনতে গত ৩ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়। তবে এই প্রস্তাবের পর শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, আমলারা নতুন অধিদপ্তরের মাধ্যমে মাউশির কলেজ অংশটুকু নিজেদের দখলে নিতে চাইছেন। তারা এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে জোরালো কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার এবং সদ্য অপসারিত শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়ের স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ অনুযায়ী, মাধ্যমিক শাখার জন্য ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর’ এবং কলেজ পর্যায়ের জন্য ‘উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা অধিদপ্তর’ গঠন করা হবে। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, এতে প্রশাসনিক কাঠামো আরও গতিশীল হবে।
শিক্ষা ক্যাডারের অভিযোগ
শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা এই প্রস্তাবকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। তাদের অভিযোগ, আমলাতন্ত্রের প্রভাব বাড়ানোর জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, এর আগে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের পর সেখানকার শীর্ষ পদগুলো আমলারা দখল করে নিয়েছেন।
কর্মকর্তারা আরও বলছেন, বিতর্কিত ২০১০ সালের শিক্ষানীতির আলোকে এই প্রস্তাব করা হয়েছে, অথচ সেই নীতির কোনো সুপারিশ গত ১৫ বছরে বাস্তবায়ন হয়নি। শুধুমাত্র পদ দখলের জন্য এখন হঠাৎ করে এই নীতির বাস্তবায়ন চাওয়া সন্দেহজনক। এটি কার্যকর হলে শিক্ষা খাতের সামগ্রিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোতে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদ বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল বলেন, শিক্ষার মূল অংশীজন হিসেবে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করেছে। তিনি সরকারের প্রতি সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার মর্যাদা রক্ষা কমিটির সভাপতি এস এম কামাল আহমেদ বলেন, “মাউশিকে দ্বিখণ্ডিত করার এই প্রচেষ্টা শিক্ষা ক্যাডারের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে আমরা জোরালো কর্মসূচি দেব।”
প্রস্তাবের বিস্তারিত ও পূর্ববর্তী প্রচেষ্টা
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মাউশির অধীনে বর্তমানে ৯টি বিভাগীয় কার্যালয়, ৬৪টি জেলা শিক্ষা অফিস, ৫১৬টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং বিপুল সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও গতিশীল করতে ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে দুটি পৃথক অধিদপ্তর গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালে সচিব কমিটির বৈঠকে মাউশিকে দুটি অধিদপ্তরে রূপান্তরের প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত ছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এছাড়া, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) ভেঙে দুটি আলাদা দপ্তর করার প্রস্তাবও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও আর্থিক সংকটের কারণে আটকে গিয়েছিল।