এবার ৪০ মণ ওজনের সম্রাট কোরবানির সেরা আকর্ষন।

এবার ৪০ মণ ওজনের সম্রাট কোরবানির সেরা আকর্ষন।
ফ্রিজিয়ান জাতের ৪০ মণ ওজনের ষাঁড় ‘সম্রাট’।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির হাটে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছে ৪০ মণ ওজনের হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল ষাঁড় ‘সম্রাট’। বাড়ির আঙিনায় আদর-যত্নে লালন-পালন করা এই দানবাকৃতি গরুটি এখন এলাকাজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার বিশাল দেহ, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য দেখার জন্য প্রতিদিনই আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন। কেউ আসছেন কেবল এক ঝলক দেখার জন্য, কেউবা ছবি তুলতে বা সম্ভাব্য দাম জানতে। কোরবানির হাটে তোলার আগেই ‘সম্রাট’ হয়ে উঠেছে ঈদের অন্যতম আলোচিত নাম।

ঈদুল আজহা সামনে রেখে কোরবানির হাটে সবচেয়ে আলোচিত গরুগুলোর একটি হয়ে উঠেছে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের জোত সাতনালা গ্রামের বিশাল ষাঁড় ‘সম্রাট’। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের এই ৪০ মণ ওজনের ষাঁড়টি চার বছর আট মাস ধরে লালনপালন করছেন খামারি আনিসুল হক। জন্মের পর থেকেই বাড়ির গোয়ালঘরে দেশি পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক খাবারে বড় করে তোলা হয়েছে তাকে।

সাদা গায়ের ওপর ছিটেফোঁটা কালো দাগওয়ালা ‘সম্রাট’-এর দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ৭ ফুট। তার বিশাল আকৃতির কারণে সাধারণ দরজা দিয়ে বের করা সম্ভব নয়, বিক্রি হলে বাড়ির পাকা দেয়াল ভেঙেই বের করতে হবে।

প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে উৎসুক মানুষ ছুটে আসছেন গরুটিকে একনজর দেখতে। মালিক আনিসুল হক জানান, খাদ্যতালিকায় রয়েছে খড়, ঘাস, ছোলা, মসুর ডাল, ভুট্টার আটা, খুদের ভাত, খইল, ধানের গুঁড়া, চিটাগুড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান। প্রতিদিন খাবার ও যত্নে খরচ হয় ৮০০-৯০০ টাকা। থাকার জায়গায় ২৪ ঘণ্টা দুটি ফ্যান চলে, আর প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হয় তিন-চার বার। বিদ্যুৎ না থাকলে গোসলের সংখ্যা বাড়ে।

গত বছর ‘সম্রাট’-এর ওজন ছিল ৩২ মণ, তখন দাম হাঁকা হয়েছিল সাড়ে ৯ লাখ টাকা। কিন্তু প্রত্যাশিত দাম না পাওয়ায় তখন বিক্রি করা হয়নি। এবার ওজন বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০ মণে, দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। আনিসুল হকের দাবি, গরুটি লালনপালনে এরই মধ্যে তার ৮ থেকে ৯ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এবার ‘সম্রাট’ বিক্রি করতে তিনি প্রস্তুত, তবে মূল্য না মিললে আবারও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন বলে জানান।

স্থানীয় খামারিরা বলছেন, এ অঞ্চলের কোরবানির হাটে এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরু।

খামারির ছেলে মো. রমেল হক জানান, ফ্রিজিয়ান জাতের এই বিশাল আকৃতির ষাঁড় ‘সম্রাট’কে কোরবানির হাটে নিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হবে। কারণ, জন্মের পর থেকে গত চার বছর আট মাস ১৭ দিন পর্যন্ত গরুটি কখনো বাড়ির বাইরে বের হয়নি। দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে হঠাৎ করে হাটের ভিড় বা পরিবেশ সামলানো তার পক্ষে কঠিন হয়ে উঠতে পারে।

এই বিশেষ ষাঁড়ের পরিচর্যা ও সুস্থতার বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রায়হান আলী। তিনি নিশ্চিত করেছেন, ‘সম্রাট’ পশুসম্পদ অধিদপ্তরের ৭২৬ নম্বর প্রুভেন বুল সিমেন থেকে উৎপন্ন একটি খাঁটি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। এর বিশুদ্ধ জাত এবং সঠিকভাবে পরিচালিত খামারি পরিচর্যার কারণেই গরুটি এত বড় আকৃতি পেয়েছে।

সব মিলিয়ে, কোরবানির হাটে ‘সম্রাট’ শুধু আকৃতির দিক থেকে নয়, বংশগত মান এবং পরিচর্যার মানদণ্ডেও হয়ে উঠেছে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *