খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এনডিসি সংলাপ

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এনডিসি সংলাপ

খুলনা, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: জলবায়ু পরিবর্তনকে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে টেকসই কৃষি, বনায়ন ও নগরায়ণে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত ও ইইউ ডেলিগেশনের প্রধান মাইকেল মিলার। বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে “NDC 3.0 for COP30: Dialogue on Agriculture, Forestry & Urbanisation” শীর্ষক সংলাপে কী-নোট স্পিকার হিসেবে তিনি এ কথা বলেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও ইয়ুথ ফর এনডিসি যৌথভাবে এই সংলাপের আয়োজন করে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো এনডিসি সংলাপ

সংলাপে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য

রাষ্ট্রদূত মিলার তার বক্তৃতায় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশ নয়, বরং অর্থনীতি ও সমাজের প্রতিটি খাতকে প্রভাবিত করছে, যার মধ্যে কৃষি, বনায়ন, নগরায়ণ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাও রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়ায় এটি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই অর্থনীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবেশবান্ধব কৌশল গ্রহণ অপরিহার্য। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এককভাবে কোনো দেশের পক্ষে কার্যকর পদক্ষেপ সম্ভব নয়, এর জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

তরুণদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকের তরুণরা আগামী প্রজন্মের নেতৃত্ব দেবে। তাদের চিন্তা-ভাবনা ও নতুন ধারণার ভেতরেই লুকিয়ে আছে টেকসই ভবিষ্যতের সমাধান। নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সবুজ প্রযুক্তি, টেকসই কৃষি ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব নগর পরিকল্পনায় তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি সতর্ক করেন যে, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে পড়বে।

শিক্ষা ও গবেষণার প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ‘এরাসমাস প্লাস’ কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শিক্ষার্থীরা ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পাচ্ছে, যা বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বক্তব্য

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, খুলনায় প্রতিদিন ঘূর্ণিঝড়, লবণাক্ততা, নদীভাঙন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনস্ (এনডিসি) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি, টেকসই বনায়ন এবং সহনশীল নগরায়ণকে প্রাধান্য দিবে। তিনি জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইতোমধ্যেই লবণসহনশীল ফসল, ম্যানগ্রোভ সংরক্ষণ এবং টেকসই শহর পরিকল্পনার ওপর কাজ করছেন, যা সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে।

উপাচার্য বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলের মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে এবং ঘরবাড়ি ও শহরগুলোকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তিনি জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগী হতে প্রস্তুত এবং নীতিগত আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

অন্যান্য বক্তা ও অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে স্বাগত ও সমাপনী বক্তব্য রাখেন দি অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ আশিক উর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন বিআইপি’র প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান এবং ইয়ুথ ফর এনডিসির পক্ষে ফাইয়াজ।

প্যানেল ডিসকাশন পর্বে আলোচনা করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্রিন ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ও সোশ্যাল প্রোটেকশন বিভাগের টিম লিডার এডউইন কোয়েককোয়েক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ জাকির হোসেন, ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ও ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোঃ নাজমুস সাদাত এবং এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মোছাঃ সাবিহা সুলতানা। মডারেটর ছিলেন বিআইপি’র জেনারেল সেক্রেটারি শেখ মুহাম্মদ মেহেদী হাসান।

আরও বক্তব্য রাখেন ইইউ ডেলিগেশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জুই চাকমা, যিনি ‘এরাসমাস প্লাস’ কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। এই প্রোগ্রাম আয়োজনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভলেন্টিয়ারদের পক্ষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়মান আহাদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুমাইয়া আক্তার ও তাসকিনা সাকিন। এ অনুষ্ঠানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ অংশগগ্রহণ করেন।

এর আগে সকালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছালে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হয় এবং তিনি উপাচার্যের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এসময় উপাচার্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানান এবং একটি মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট উপহার দেন। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ নূরুন্নবী ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *