জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না: চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত

জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না: চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত

“জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস- ২০২৫” উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। তাদের আদর্শ অনুসরণ করেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লড়াই চলবে।

মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে দামপাড়ায় গরীবুল্লাহ শাহ মাজারে শহীদ মোহাম্মদ আলমের কবর জিয়ারত করার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের প্রতি আমাদের ঋণ অনেক। আমরা সেই ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতা দূর করতে বিভেদ ভুলে সবাইকে জাতীয় ঐক্যের ছায়াতলে আসতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট আমাদের জন্য আনন্দ এবং বেদনার দিন। আনন্দ এই জন্য যে, আজকের প্রজন্মও শহীদদের আত্মত্যাগ মনে রেখেছে। আর বেদনা এই জন্য যে, শহীদ পরিবারগুলোর কান্না আজও থামেনি। এই শোক আমাদের সব আনন্দকে ম্লান করে দেয়।”

মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা শহীদদের স্মৃতিকে বুকে ধারণ করে বলতে চাই—একটি দুর্নীতিমুক্ত, মৌলিক অধিকারসমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যই আমাদের একমাত্র শক্তি। বিভাজন ও অনৈক্য দিয়ে শহীদদের আত্মত্যাগের মর্যাদা রক্ষা করা যাবে না।”

চসিক মেয়র আরও বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি অত্যাচারিত হয়েছে, আন্দোলনে অনেকে প্রাণ দিয়েছেন। তাদের আত্মত্যাগের মর্যাদা দিতে হলে দল-মত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি। ঐক্য ছাড়া সেই বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়, যা শহীদরা দেখতে চেয়েছিলেন।”

তিনি বলেন, “আমাদের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, আইনের শাসন, বাক-স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার—খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—এগুলো নিশ্চিত করতে হবে। এটাই হবে শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত সম্মান। আমরা ঐক্যের শক্তি দিয়ে বিজয় অর্জন করতে চাই, যাতে আর কোনো অভ্যুত্থান দিবস পালন করার প্রয়োজন না হয়।”

মেয়র বলেন, “আমরা ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, ৭১-এ আমাদের পূর্বসূরিরা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, ২০২৪-এ আমাদের সন্তানেরা শহীদ হয়েছেন। বারবার কেন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে হবে? আমরা চাই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এমন একটি সমতাভিত্তিক জাতি গড়তে, যেখানে সামাজিক ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে।”

তিনি আরও বলেন, “গণতন্ত্র ধ্বংস করে কেউ টিকে থাকতে পারে না। তাই গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে ভোটের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আমি যেন কেন্দ্রে গিয়ে আমার ভোট দিতে পারি, সেই অধিকার রক্ষা করাই আমাদের লড়াই। ঐক্যের ভিত্তিতেই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”

শহীদ মোহাম্মদ আলমের কবর জিয়ারত শেষে মেয়র তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করেন। এরপর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে আয়োজিত মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় অংশ নেন।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার ইখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, প্রধান প্রকৌশলী আনিসুর রহমান, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ড. কিসিঞ্জার চাকমা, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. ইমাম হোসেন রানা, আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদ, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ), সমাজকল্যাণ ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা মামুনুর রশীদসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *