রাজনৈতিক উত্তাপ ও নির্বাচন প্রসঙ্গ: উত্তাল সময়ের পটভূমি

সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে যেমন তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে, তেমনি দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনাকে কিছুটা আড়াল করে দিয়েছে—এমন মত অনেকের। তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, এসব ঘটনা নির্বাচন ইস্যুকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না।

বিএনপির পক্ষ থেকে বছরের শেষভাগে নির্বাচন চেয়ে রোডম্যাপের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যদিকে জামায়াত চাইছে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার শেষে ডিসেম্বর অথবা নতুন বছরের শুরুতে নির্বাচন আয়োজন হোক।

ঠিক এই সময়ে ‘করিডর’ ইস্যু ঘিরে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরই মাঝে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তরফ থেকে আন্দোলন শুরু হয়।

তিন দিন ধরে রাজধানীর ‘যমুনা’ ভবন ঘিরে অবস্থান ও গণজমায়েতের পর সরকার আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে। এনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এই আন্দোলনে জামায়াত, হেফাজতসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের সমর্থন দেখা যায়।

এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণের মতো দাবিগুলো কি নির্বাচনী আলোচনাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে? এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, এসব দাবির পেছনে নির্বাচনী হিসাব নয়, বরং জাতীয় স্বার্থ রয়েছে।

গাজীপুরে হাসনাতের ওপর হামলার পরপরই তিনি আন্দোলনের ডাক দেন। এনসিপির ভেতরে দ্বিধা থাকলেও আন্দোলনের নেতৃত্বে তার ভূমিকা স্পষ্ট হয়। ফলে দলে অস্বস্তিও দেখা দেয় বলে জানা গেছে।

এদিকে বিএনপি মনে করে, আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া উচিত, তবে তা আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই। তাদের মতে, কোনো ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দাবি মানুষের সার্বজনীন ভোটাধিকারকে আটকে রাখতে পারে না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “মানুষ এখন আর কাউকে মালিক দেখতে চায় না, তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে চায়।”

জাতীয় সংগীত ঘিরে বিতর্কও রাজনীতিকে নতুন মোড়ে এনেছে। শাহবাগে গণজমায়েতে কিছু বিতর্কিত স্লোগান ও জাতীয় সংগীত গাইতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এরপর এনসিপি, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কর্মীদের মধ্যে বিভাজনের আভাস দেখা যায়।

জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের মনে করেন, একটি গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেশের স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি। নির্বাচনের আগে মৌলিক সংস্কারগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত।

অন্যদিকে বিএনপি এখন নির্বাচনী প্রস্তুতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ, তরুণদের নিয়ে বিভাগীয় সমাবেশের মাধ্যমে দলটি ভোটের ময়দানে সক্রিয় থাকার বার্তা দিচ্ছে।

সবমিলিয়ে, রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও সমানতালে এগিয়ে চলছে—যার পরিণতি নির্ধারণ করবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *