স্থান: টোকিও | তারিখ: ৩০ মে ২০২৫
১. ২০২৫ সালের ৩০ মে জাপানে এক সরকারি সফরে অবস্থানকালে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে টোকিওতে বৈঠক করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিঞ্জি ইশিবা।
২. দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ক স্মরণ করে, উভয় নেতৃবৃন্দ কৌশলগত অংশীদারিত্বে তাদের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা সকলের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ একটি উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের (FOIP) অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা পুনরায় জোর দেন। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিষয়ে মতবিনিময়ের মাধ্যমে তারা জাতিসংঘ সনদের মূলনীতিতে আস্থাশীল থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেন। উভয় পক্ষ বহুপাক্ষিকতাকে সম্মান জানিয়ে আইনের শাসন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন।
৩. উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়সহ সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে জাতীয় উন্নয়ন, সংস্কার এবং শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের প্রয়াসে জাপানের পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেন। অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে জাপানের সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান, বিশেষ করে মোহেশখালী-মাতারবাড়ি ইন্টিগ্রেটেড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (MIDI)-এর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
৪. উন্নয়ন নীতিগত ঋণ ও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশন (পর্ব I)-এ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের নির্মাণে জাপানের ঋণচুক্তিকে উভয় দেশ স্বাগত জানায়। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংস্কার ও জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৫. বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বিআইডিএ’র ওয়ান স্টপ সার্ভিস (OSS), প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন, ব্যাটারিচালিত বাইসাইকেল কারখানা, সাইবার নিরাপত্তা পাইলট প্রকল্প, এবং বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোনে (BSEZ) জমি চুক্তিসহ কয়েকটি উদ্যোগকে তারা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে। তারা পারস্পরিক লাভজনক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (EPA) দ্রুত বাস্তবায়নে নিজ নিজ দপ্তর ও আলোচনা দলের প্রতি নির্দেশ দেন।
৬. জাপানের অফিসিয়াল সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স (OSA) এর আওতায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য পাঁচটি পেট্রল বোট দ্রুত সরবরাহের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি স্থানান্তর বিষয়ে নীতিগত চুক্তি হওয়ায়, এর দ্রুত বাস্তবায়নের বিষয়ে উভয় দেশ আগ্রহ প্রকাশ করে।
৭. মানবসম্পদ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদারে পারস্পরিক মতামত আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে তারা আলোচনা করেন। অধ্যাপক ইউনূস মানবসম্পদ উন্নয়নে জাপানের ধারাবাহিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৮. প্রধানমন্ত্রী ইশিবা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। অধ্যাপক ইউনূস ভাষান চরের বাস্তুচ্যুতদের জন্য জাপানের মানবিক সহায়তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। উভয় দেশ মত প্রকাশ করেন যে, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনই এই সংকটের দীর্ঘমেয়াদি সমাধান, যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
৯. অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস প্রধানমন্ত্রী ইশিবাকে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তরিক অভ্যর্থনা এবং অতিথিপরায়ণতার জন্য ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে, পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।