
জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এবং লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি-এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস সরবরাহ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা দেশের জ্বালানি খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
ঢাকার বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. সাইফুল ইসলাম, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সুইজারল্যান্ড ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতগণসহ জেজিটিডিএসএল ও লাফার্জহোলসিমের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।

চুক্তি অনুযায়ী, জালালাবাদ গ্যাস আগামী দশ বছরে দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করবে লাফার্জহোলসিমকে, যা ১৮ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে কার্যকর হবে। এই চুক্তি শিল্প ও ক্যাপটিভ পাওয়ার—দুই শ্রেণিতেই গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে।
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এই উদ্যোগকে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা এবং শিল্পোন্নয়নের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমাতে এবং টেকসই সরবরাহ নিশ্চিত করতে সঠিক মূল্য নির্ধারণ অপরিহার্য।” তিনি জানান, নতুন এই চুক্তিতে মূল্য নির্ধারণ BERC (বার্ক)-এর আওতাধীন হবে, যা ভবিষ্যতে স্বচ্ছতা ও ভারসাম্য রক্ষা করবে।

উল্লেখযোগ্যভাবে, এই চুক্তিতে পূর্বের কিছু সমস্যা সমাধান করা হয়েছে এবং দুটি নতুন বিষয় সংযুক্ত হয়েছে—দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধিভুক্তি। উপদেষ্টা আরও বলেন, ছাতকে লাফার্জের অবস্থানগত সুবিধার কারণে গ্যাসের চাপ বেশি থাকবে, যা উৎপাদনে সহায়ক হবে।
বিশ্ববাজারে যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তেল-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা জানান, স্বল্পমেয়াদে মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। সরকার মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে তেল-গ্যাস সংগ্রহ করছে এবং এলএনজি’র জন্য দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি কার্যকর রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি লাফার্জহোলসিমের বাংলাদেশের শিল্পখাতে অবদানের প্রশংসা করে বলেন, এই চুক্তি শিল্পে স্থিতিশীল গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে। সুইজারল্যান্ড ও স্পেনের রাষ্ট্রদূতরাও লাফার্জের অবদান ও বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের সম্পর্কের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ পিএলসি-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, “এই চুক্তি শুধু গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” তিনি ভবিষ্যতেও এমন আরও অংশীদারিত্বমূলক চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, বৈশ্বিকভাবে FDI (বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ) কমে গেলেও, এই চুক্তি নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি করবে এবং দেশে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থা বৃদ্ধি করবে।
এই চুক্তি শুধু একটি বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নয়, বরং বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।