ইসরায়েলি কারাগারে গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ, ‘পতাকায় চুম্বন’ করতে বাধ্য করার দাবি

ইসরায়েলি কারাগারে গ্রেটা থুনবার্গকে নির্যাতনের অভিযোগ, ‘পতাকায় চুম্বন’ করতে বাধ্য করার দাবি

ইসরায়েলি নৌবাহিনীর হাতে আটক হওয়া ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক ও সুপরিচিত সুইডিশ জলবায়ু অ্যাক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ ইসরায়েলের কারাগারে দুর্ব্যবহার এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা সংস্থা আদালাহ একটি প্রতিবেদনে এই অভিযোগ সামনে এনেছে। তাদের পাশাপাশি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানও তাদের শনিবারের এক প্রতিবেদনে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। বুধবার রাতে গাজাগামী ফ্লোটিলা অভিযানে ইসরায়েলি নৌবাহিনী ৪২টি নৌযানসহ ৪৫০ জনেরও বেশি আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মীকে আটক করে।

আদালাহর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বহু আটককৃত অধিকারকর্মী কারাগারে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি পাচ্ছেন না, এবং কেউ কেউ ইসরায়েলি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২২ বছর বয়সী জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকে কঠোর ও অনুপযুক্ত পরিবেশে রাখা হয়েছে। সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানা যায়, দূতাবাসের কর্মকর্তারা থুনবার্গের সঙ্গে দেখা করতে সক্ষম হন এবং তিনি পানিশূন্যতায় ভোগার কথা জানান, কারণ তাকে পর্যাপ্ত পানি ও খাবার দেওয়া হয়নি। সুইডিশ দূতাবাসের এক ইমেইলে আরও বলা হয়েছে, থুনবার্গের শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দিয়েছে, যা তিনি ছারপোকার (বেডবাগ) কারণে হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে দীর্ঘ সময় ধরে শক্ত মেঝেতে বসিয়ে রাখা হয়েছে এবং বন্দিদের সঙ্গে কারারক্ষীদের আচরণ ছিল অত্যন্ত কঠোর।

এই নির্যাতনের মাত্রা আরও গুরুতর দিকে মোড় নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট এরসিন চেলিক। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ থুনবার্গকে লক্ষ্যবস্তু করে নির্যাতন চালায় এবং তাকে ‘ইসরায়েলি পতাকায় চুম্বন করতে বাধ্য’ করা হয়। তবে ইসরায়েলি কারা প্রশাসনের এক মুখপাত্র এই ধরনের কোনো ঘটনার বিষয়ে ‘অবগত নন’ বলে জানিয়েছেন। আদালাহর আইনজীবীদের কাছে অন্যান্য বন্দিরাও অভিযোগ করেছেন যে, আটক প্রক্রিয়ার সময় তাদের ধাক্কা দেওয়া, মাটিতে ফেলে রাখা, মুষ্টিবদ্ধ আঘাত করার মতো ঘটনা ঘটেছে। কেউ কেউ জানান, অভিবাসন ট্রাইব্যুনালে হাজির করার আগ পর্যন্ত তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা হয়েছিল।

এই বিতর্কের মধ্যে চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির কেতজিওত কারাগার পরিদর্শন করে বলেন, ফ্লোটিলা সদস্যদের ‘ন্যূনতমেরও ন্যূনতম’ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, “যেমনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সন্ত্রাসবাদের সমর্থক এই অধিকারকর্মীরা এখন নিরাপত্তা কারাগারে আছেন। তারা এখানে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বন্দিদের মতোই কঠোর শর্তে রয়েছে।” উল্লেখ্য, এই ‘সুমুদ ফ্লোটিলা’ মানবিক সহায়তা ও গাজার ওপর আরোপিত দীর্ঘস্থায়ী নৌ অবরোধের প্রতিবাদে যাত্রা শুরু করেছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *