
ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২২টি ভাঙা স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে। এতে নতুন করে আরও ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার মোট ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বাঁধ ভাঙা স্থানগুলো দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ হলে দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্তমানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে।
বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও আশ্রয়কেন্দ্রে হাজারো মানুষ
বন্যার কারণে পাঁচ উপজেলার অনেক এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। তবে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি কমে যাওয়ায় কিছু যান চলাচল শুরু হয়েছে। জেলার ৮২টি আশ্রয়কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৯ হাজার ২০০ জন আশ্রয় নিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানায়, পরশুরাম ও ফুলগাজীতে পানি কমছে এবং সেখানকার অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছে। তবে ফেনী সদর ও ছাগলনাইয়া উপজেলার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। ঘরবাড়ি, আসবাব, ফসলি জমি ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
ফেনীর ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে দৌলতপুর বন্দুয়ার এক বাসিন্দা মারা গেছেন বলে জানা গেছে।
নোয়াখালীতে থেমেছে বৃষ্টি, ধীরে নামছে পানি
নোয়াখালীতে টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাত গতকাল থেমেছে। তবে পানিবন্দি অবস্থা থেকে এখনও মুক্তি মেলেনি। জেলা শহর মাইজদীসহ সুবর্ণচর, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলায় হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দি।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, সেন্ট্রাল রোড, হাউজিং এস্ট্রেট, লক্ষ্মীনারায়ণপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি কিছুটা কমলেও এখনও হাঁটুপানি জমে আছে। ড্রেনের ময়লা পানিতে চলাচল করতে হচ্ছে লোকজনকে।
টানা বর্ষণে রাস্তায় গর্ত তৈরি হয়েছে এবং অনেক বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকেছে। শহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “পাঁচ দিন ধরে পানিতে ঘরবন্দি। রান্না-খাওয়া সবই ঘরের ভেতর পানিতে দাঁড়িয়ে করতে হচ্ছে।”
৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে
জেলা কৃষি অফিস জানায়, নোয়াখালীর ৭ হাজার ৩১৬ হেক্টর জমির আউশ ধান, আমনের বীজতলা ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।
সদরের মুকিমপুর গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জানান, “আমার দেড় একর জমির ধান, আদা, পেঁপে সবই পানির নিচে। বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে।”
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, পানি কমতে থাকায় মানুষ ঘরে ফিরছেন। নোয়াখালী ও গাবুয়া খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প পাস ও বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: আরও ১০ দিন বৃষ্টি হতে পারে
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় আগামী ১০ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। এর মধ্যে কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।