
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের (ইপি) সদস্যরা। ইউরোপীয় সংসদের সদস্য (এমইপি) ও মানবাধিকার উপকমিটির (ডিআরওআই) সভাপতি মুনির সাতোরির নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। আজ তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চলমান সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলো সম্পর্কে প্রতিনিধি দলকে বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, সরকার মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে কাজ করছে। একই সাথে, ভবিষ্যতে যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ওপরও জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং জোরপূর্বক গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের ঐচ্ছিক প্রোটোকলের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক দলিলে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি নির্বাচন কমিশনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমর্থনের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশে ইইউ-এর প্রাক-নির্বাচন অনুসন্ধান মিশনের আসন্ন সফরকে স্বাগত জানান।
বাংলাদেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতির অগ্রগতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট প্রতিনিধি দল। তারা বর্তমান মানবাধিকার পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সরকারের ধারাবাহিক সম্পৃক্ততা ও জনগণের ভোটদানের আকাঙ্ক্ষার প্রশংসা করেন। প্রতিনিধি দলের একজন সদস্য বলেন, “বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র যখন পিছিয়ে পড়ছে, তখন বাংলাদেশ অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।” এর মধ্য দিয়ে ইইউ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে জানায়।
ডিআরওআই সভাপতি মুনির সাতোরি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি সীমিত সম্পদ থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের নিরন্তর প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন। জবাবে, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা রোহিঙ্গা সংকটের ওপর বৈশ্বিক মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ইইউ-এর ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং মানবিক সহায়তায় চলমান ঘাটতি পূরণের আহ্বান জানান। তিনি রোহিঙ্গাদের দ্রুত ও নিরাপদে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য ইইউ-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের অনুরোধও পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রতিনিধি দলটি আগামীকাল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের কথা রয়েছে এবং ১৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করবে।