
কুমিল্লার হোমনায় এক ঘটনায় চারটি মাজারসহ বেশ কিছু স্থাপনে হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার অভিযোগে দুই হাজার দুইশ অজ্ঞাতনামা গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হোমনা থানার এসআই তাপস কুমার সরকার মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, এলাকায় এখনও থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে একজন যুবক ফেসবুক আইডি থেকে ধর্মীয় কটূক্তি মূলক একটি পোস্ট করেন। এ ঘটনার পর ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা থানার সামনে জড়ো হয়ে যুবকের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করেন। দুপুরের দিকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় সেই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ইসলামী যুব সেনা হোমনা উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম যুবকের বিরুদ্ধে হোমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
ফেসবুক পোস্টের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এলাকায় বিক্ষুব্ধ মানুষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে আসাদপুর গ্রামের কফিল উদ্দিন শাহ ও হাওয়ালি শাহ মাজারে আগুন লাগিয়ে দেন এবং কালাই শাহ ও আবদু শাহ মাজারে হামলা-ভাঙচুর চালান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিনে আসাদপুর গ্রামে গেলে দেখা যায়, মামলা এবং গ্রেপ্তারের আতঙ্কে এলাকা বেশ শূন্য। পুড়ে যাওয়া মাজারের সামনে গ্রেপ্তার যুবকের মা জানান, “আমরা ছেলে পুলিশের কাছে তুলে দিয়েছি। তারপরও আমাদের মাজার ও বাসায় আগুন দেওয়া হয়েছে। পুলিশ নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা শুধু কাপড়ে ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ কোনো মালামাল বাঁচানো যায়নি। কেবল জীবন রক্ষা করতে পেরেছি।”
এর আগে বৃহস্পতিবার কুমিল্লা পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, “ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। তবে যারা আইন হাতেই তুলে নিয়ে মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”