
নিউ ইয়র্ক, ২৯ সেপ্টেম্বর: জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আগামীকাল (৩০ সেপ্টেম্বর) রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরুর আগে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দিনব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছেন। সোমবার নিউ ইয়র্কের একটি হোটেলে তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এবং মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত জুলি বিশপ-এর সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন। এই আলোচনায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মানবিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক সাহায্যের হ্রাস এবং বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার কৌশল নিয়ে গভীর পর্যালোচনা করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ইউএনএইচসিআর প্রধান গ্র্যান্ডি-র কাছে উদ্বেগের সঙ্গে উল্লেখ করেন যে, গত ১৮ মাসে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে, যা গুরুতর মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বৃদ্ধি করেছে এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য কমে যাওয়ার কারণে ১০ লাখেরও বেশি উদ্বাস্তুকে প্রভাবিত করছে উল্লেখ করে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে মঙ্গলবারের ল্যান্ডমার্ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন—যা কেবল রোহিঙ্গাদের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা প্রথম—সংকট নিরসনের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করবে এবং এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে আশা যোগাবে। এ সময় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান গ্র্যান্ডিকে জানান যে, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চলমান যাচাই প্রক্রিয়া চলছে এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা যাচাই করা হয়েছে। গ্র্যান্ডি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত আঞ্চলিক সম্মেলনের প্রশংসা করেন, যেখানে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নেতারা প্রথমবারের মতো চার দিনের আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সংকটের টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য প্রধান বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত বলে তিনি পরামর্শ দেন।
মিয়ানমারের উপর জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলি বিশপ (অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী)-এর সঙ্গে বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন: “রোহিঙ্গা মানুষদের স্বদেশে ফিরে আসাই একমাত্র কার্যকর সমাধান। কোনো বিকল্প নেই।” এই মানবিক বিপর্যয়কে পৃথিবী ভুলে যেতে পারে না মন্তব্য করে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে আসন্ন সম্মেলন কিছু অর্থপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে আসবে। বিশপ রোহিঙ্গা সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল উৎসের বৈচিত্র্য আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন এবং ওআইসি সদস্য দেশগুলিকে তাদের মানবিক অবদান বাড়ানোর আহ্বান জানান। এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকগুলোতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যারা সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের কূটনৈতিক অবস্থান জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা করেন। এই উদ্যোগগুলো প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ সরকার এবং আন্তর্জাতিক অংশীদাররা যৌথভাবে এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের সমাধানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছে।