
খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এবং এর পরবর্তী সহিংস ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। পরস্পরবিরোধী তথ্য, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে সুসংগঠিত সংঘাত এবং প্রাণহানির ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
খবরের মূল তথ্যানুযায়ী, ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই শয়ন শীল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে এই মামলার আইনি প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে:
সিসিটিভি ফুটেজ: গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় মামলার এজাহারে উল্লেখিত সময়ে গ্রেপ্তারকৃত শয়ন শীল খাগড়াছড়ি বাজারের বিভিন্ন দোকানে কেনাকাটা করছিলেন।
মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন: এ ঘটনায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক ডা. জয়া চাকমার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “ওই ছাত্রীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। এমনকি সে ধর্ষণের শিকারও হয়নি।” প্রতিবেদনে আলামত পরীক্ষার ১০টি সূচকের সবকটিই ‘স্বাভাবিক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই পরস্পরবিরোধী তথ্য ও অসঙ্গতি জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে বলে ডাকসু মন্তব্য করেছে।
ডাকসু জোর দাবি জানিয়েছে, স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে যদি ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়, তবে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, যদি প্রমাণিত হয় যে ঘটনাটি সাজানো বা পরিকল্পিত, তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।
ডাকসু গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া না মেনে সুসংগঠিতভাবে অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট, ঘরবাড়ি পোড়ানো, পর্যটক হয়রানি এবং একে জাতিগত সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা এবং তৈইচিং মারমা নামে তিনজন নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। ডাকসু এই হামলা, সংঘাত ও হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছে এবং জড়িতদের যথাযথ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে।
ডাকসু তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, এ ধরনের গুরুতর অভিযোগকে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে ব্যর্থ হওয়া এবং অপতৎপরতাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে না পারা প্রশাসনের সীমাহীন অদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার অভাবকে প্রকাশ করে।
এছাড়া, ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য বিভিন্ন মহলের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীর অপতৎপরতা ও উস্কানি বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করছে এবং জাতিগত সংঘাতে রূপান্তরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলেও ডাকসু অভিযোগ করেছে।
ডাকসু দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের মাধ্যমেই পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব। তারা স্মরণ করিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশ কোনো একক জাতিগোষ্ঠীর নয়, বরং সকল নাগরিকের সমান অধিকার ও মর্যাদার দেশ, যেখানে দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।