আব্দুর রহমান সাদিপ

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের সরকারি গেজেট নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত বছরের উত্তাল আন্দোলনে এ উপজেলায় বড় ধরনের সংঘর্ষ না ঘটলেও সম্প্রতি প্রকাশিত তালিকায় শাহরাস্তির ২৮ জনকে ‘আহত জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে সরেজমিন অনুসন্ধান ও আন্দোলনকারীদের বক্তব্যে দেখা গেছে—তালিকায় অনেক নাম ভুয়া ও বিতর্কিত।
অভিযোগ অনুযায়ী, কেউ বন্ধ হাসপাতালের চিকিৎসা দেখিয়ে নাম তুলেছেন, কেউ দীর্ঘদিনের মানসিক সমস্যাকে আন্দোলনের আঘাত বলে উপস্থাপন করেছেন, আবার কেউ ছাত্রলীগের কর্মী হয়েও আহত তালিকায় স্থান পেয়েছেন।
- গেজেট নং ৯৩৯-এর মো. রায়হান দাবি করেছেন, তিনি যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহরাস্তির চিতোষী আইডিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। কিন্তু স্থানীয়দের মতে, হাসপাতালটি আন্দোলনের আগেই বন্ধ হয়ে যায়।
- গেজেট নং ৯২২-এর মো. ইউছুব আলী বাঁশের আঘাতে আহত হয়ে সরকারি সহায়তা পান বলে দাবি করলেও, সংশ্লিষ্ট স্থানে সেদিন কোনো সংঘর্ষ ঘটেনি।
- গেজেট নং ৯২০-এর মো. কামরুল হাসান রাব্বি সিলেটের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ছাত্রলীগের কর্মী হলেও শাহরাস্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
- এছাড়া গেজেট নং ১০৪৪-এর নাহিদুল ইসলাম রাতুল মানসিক সমস্যাকে আন্দোলনের আঘাত হিসেবে দেখিয়ে সহায়তা নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এসডিএফ (সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন) থেকেও শাহরাস্তির ১১ জনকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নাজমুল হাসানের পরিবারকে ‘জুলাই আন্দোলনে নিহত’ দেখিয়ে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। অথচ স্থানীয়দের দাবি, নাজমুল নারায়ণগঞ্জে একটি কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান। এ ঘটনায় তার মৃত্যুকেও প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন অনেকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা আব্দুল কাইয়ুম মাহিন বলেন, “আন্দোলনের সময় যারা রাজপথে ছিল তারা বাদ পড়েছে, অথচ অচেনা অনেকের নাম তালিকায় উঠেছে। আমরা চাই ভুয়া নামগুলো বাতিল করে প্রকৃত আহতদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
উপজেলা নেতা আক্তার হোসেন শিহাব অভিযোগ করেন, “আমি নিজে আহত হয়েছি, কিন্তু আমার নাম তালিকায় নেই। প্রশাসনের উচিত যাচাই করে প্রকৃত আহতদের স্বীকৃতি দেওয়া।
শাহরাস্তি প্রেস ক্লাব সভাপতি মঈনুল ইসলাম কাজল বলেন, আন্দোলনের সময় তেমন বড় সংঘর্ষ হয়নি। অথচ গেজেটে অনেক নাম এসেছে যাদের সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের কোনো ধারণাই নেই
শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আকলিমা জাহান জানান, আন্দোলনের সময় হাসপাতালে ১৫ জন চিকিৎসা নিলেও তারা সবাই হালকা আঘাতপ্রাপ্ত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিয়া হোসেন বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে পাঁচজনের নাম গেজেট থেকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি। প্রয়োজনে আরও যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহরাস্তিতে জুলাই আন্দোলনে আহতদের তালিকা নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ভুয়া নাম অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি সহায়তা নেওয়া হয়েছে, অথচ প্রকৃত আহতরা বঞ্চিত রয়েছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।