বুকের ব্যথা গ্যাসের কারণে, নাকি হৃদযন্ত্রজনিত — কীভাবে বুঝবেন?

বুকের ব্যথা গ্যাসের কারণে, নাকি হৃদযন্ত্রজনিত — কীভাবে বুঝবেন?
ছবিঃ সংগৃহিত

সকাল থেকেই বুকের ভেতর অস্বস্তি আর ব্যথা অনুভব করছেন। আগের রাতে দাওয়াতে গিয়ে নানা খাবার খাওয়ার পর মনে হচ্ছে, নিশ্চয়ই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাই হয়েছে। তাই ঘরে থাকা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ও অ্যান্টাসিড খেয়ে নিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা আরও বাড়ছে, শরীর খারাপ লাগছে। অবশেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। বিস্তারিত ইতিহাস নেওয়ার পর চিকিৎসক মনে করলেন, এটি হৃদরোগজনিত ব্যথা হতে পারে। ইসিজি করার পর সেই সন্দেহ সত্যি হলো। জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। ভাগ্য ভালো, বড় বিপদ এড়িয়ে গেলেন। কিন্তু সামান্য দেরিতেই পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারত—মৃত্যুর ঝুঁকিও ছিল। তাই বুকের ব্যথা গ্যাসের নাকি হার্টের, তা বুঝে সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।

ডা. সাইফ হোসেন খান

গ্যাসের ব্যথার লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য :

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বলতে আমরা সাধারণত পেটের নানা ধরনের অস্বস্তিকে বুঝি। এটি একাধিক রকমে দেখা দিতে পারে। গ্যাসের কারণে পেট ফুলে থাকা, ভারী লাগা বা অল্প খাওয়াতেই পেট ফেঁপে ওঠার অনুভূতি হতে পারে। অনেক সময় খাওয়ার পর মনে হয় খাবার ওপর দিকে উঠে আসছে বা ঢেকুরের মতো আসছে। ব্যথাটি কখনো হালকা চিনচিনে ধরনের হয়, কখনো আবার তীব্র বা জ্বালাপোড়াযুক্তও হতে পারে।

সাধারণত গ্যাসের ব্যথা পেটের উপরের দিকে হয়, যা বুকের নিচে বা মাঝ বরাবর অনুভূত হয়। তবে এটিই বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে, কারণ হৃদযন্ত্রের সমস্যা থেকেও একই স্থানে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। যেমন, ‘ইনফেরিয়র মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন’ নামের এক ধরনের হার্ট অ্যাটাক একই জায়গায় ব্যথা তৈরি করতে পারে।

গ্যাসের ব্যথা বেশির ভাগ সময় অস্থায়ী হয় এবং গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করলে উপশম হয়ে যায়। এটি প্রাথমিকভাবে খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত—কখনো খালি পেটে বাড়ে, কখনো বা খাবার পর। কিন্তু হার্টের ব্যথা এমন নয়—তা সময়ের সঙ্গে তীব্র হতে পারে এবং সাধারণ ওষুধে সাড়া দেয় না।

বুকের ব্যথা গ্যাসের কারণে, নাকি হৃদযন্ত্রজনিত — কীভাবে বুঝবেন?
সঠিক সময়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা পেলে হার্টের সমস্যার বড় ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব

হার্টের ব্যথার লক্ষণ ও করণীয় :

হার্টের ব্যথার বৈশিষ্ট্য:

হৃদযন্ত্রের ব্যথা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট রকমের অনুভূতি দেয়। এটি বেশির ভাগ সময় বুকের মাঝখানে চাপ বা ভারী কিছু বসে থাকার মতো লাগে। ব্যথা হঠাৎ শুরু হতে পারে—যেমন হার্ট অ্যাটাক বা অস্থির প্রকৃতির অ্যানজিনার ক্ষেত্রে। আবার ধীরে ধীরে বাড়তে পারে, যা স্থিতিশীল অ্যানজিনার ক্ষেত্রে দেখা যায়।

এই ব্যথা বুক থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে চোয়াল, ঘাড়, পেট বা বাঁ হাতের দিকে। সাধারণত হাঁটা বা শারীরিক পরিশ্রমে ব্যথা বাড়ে এবং বিশ্রাম নিলে বা নির্দিষ্ট ওষুধ (যেমন নিট্রোগ্লিসারিন স্প্রে) ব্যবহার করলে উপশম হয়। তবে এটি সবসময় একরকম হয় না। যেমন:

  • ডায়াবেটিক রোগীরা অনেক সময় ব্যথা কম অনুভব করেন বা বুঝতে পারেন না।
  • নিয়মিত কায়িক পরিশ্রমে অভ্যস্ত ব্যক্তিরাও ব্যথা হালকা করে অনুভব করতে পারেন।

করণীয়:

বুকে ব্যথা হলে কখনোই সেটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। যদি ব্যথাটি হার্টের ব্যথার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, বিশেষ করে বুকের মাঝ বরাবর অনুভূত হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রাথমিকভাবে যদি মনে হয় এটি গ্যাসের ব্যথা, এবং গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার পরও আরাম না পাওয়া যায় বা অস্বস্তি বাড়তে থাকে, তাহলে দেরি না করে হাসপাতালে যেতে হবে।

সতর্ক বার্তা:
সব ধরনের বুকের ব্যথা হৃদযন্ত্র থেকে আসে না। গ্যাস্ট্রিক, মাংসপেশির টান, হাড় বা জয়েন্টের ব্যথা, এমনকি প্যানিক অ্যাটাক থেকেও বুকের মাঝখানে ব্যথা হতে পারে। তাই সচেতন থাকা এবং লক্ষণ বুঝে যথাসময়ে চিকিৎসা নেওয়া জীবন বাঁচাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *