
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্য, অনিয়ম, শৃঙ্খলাভঙ্গ, দুর্নীতি ও একক আধিপত্যের অভিযোগ তুলে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিটের শতাধিক নেতাকর্মী একযোগে পদত্যাগ করেছেন।
শুক্রবার দুপুরে নওগাঁ শহরের প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা গণঅধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি এবাদুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আখতারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান, জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি শাকিব খানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে এবাদুল ইসলাম বলেন, সংগঠন শুরুতে নীতি-নৈতিকতা ও আদর্শের কথা বললেও বর্তমানে তা থেকে পুরোপুরি সরে গেছে। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে তাদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। যারা মাঠপর্যায়ে সংগঠন গড়ে তুলেছেন, তাদের মতামত অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। বরং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের সঙ্গে কর্তৃত্ববাদী আচরণ করছে, যা অগণতান্ত্রিক ও অসম্মানজনক।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দলের ভেতরে ভিন্নমত প্রকাশের কোনো সুযোগ নেই, উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে একতরফা সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি নওগাঁ জেলা উপকমিটি গঠনের পরও তাদের মতামত উপেক্ষা করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, যা উপকমিটি জানতেও পারেনি। অথচ মূল সংগঠন গণঅধিকার পরিষদ হলেও নিয়ন্ত্রণ করছে অঙ্গসংগঠন যুব অধিকার পরিষদ, যা সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
এবাদুল ইসলামের অভিযোগ, বিভিন্ন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেন হয়েছে। এছাড়া যেকোনো কর্মসূচি করতে হলে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার শর্তে জেলা থেকে টাকা সংগ্রহ করতে বলা হয়, যা অন্যায় চাপের সামিল। নতুন ধারার রাজনীতির কথা বললেও সংগঠনটি এখন পুরনো রীতি-নীতি মেনে চলছে। শুধু নওগাঁ নয়, রাজশাহী বিভাগ থেকেও সংগঠনের ক্ষতি করা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ তোলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নাম উল্লেখ করে বলেন, রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কবির, কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য আমিনুল ইসলাম মাসুদ এবং যুব অধিকার পরিষদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ সম্পাদক এস এম সাব্বির নানা অনিয়মে জড়িত থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বর্তমান নেতৃত্ব সংগঠনকে মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করেছে। তাই আত্মমর্যাদা, রাজনৈতিক আদর্শ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই নওগাঁ জেলার শতাধিক নেতাকর্মী একযোগে সংগঠন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
জেলা ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি শাকিব খান অভিযোগ করে বলেন, সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক পদে যাকে রাখা হয়েছে, তার কোনো যোগ্যতা নেই। কেবল স্বজনপ্রীতির কারণে তাকে এ পদ দেওয়া হয়েছে। তিনি ঘোষণা দেন, এই নতুন জেলা কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করে নওগাঁ জেলায় গণঅধিকার পরিষদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ এবং যুব অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একক আধিপত্যের বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন।